আজ [bangla_date], [english_date]

ফুটবল মাঠ থেকে র‌্যাম্পের ক্যাট ওয়াক কারিশমা আলী

ডেস্ক সংবাদ : ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে মানুষ কী না করতে পারে? সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচু পাকিস্তানের চিত্রল উপত্যকার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম কারিমশা আলীর। সেখানে প্রযুক্তিগত সুবিধা নেই। ইন্টারনেটের প্রসারও সীমিত। শিক্ষাদীক্ষায় অনেক পিছিয়ে নারীরা। স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই ঝরে যায় বেশির ভাগ। এমন একটি অঞ্চল থেকেই বিশ্বের কাছে নিজেকে চিনিয়েছেন কারিশমা আলী। বয়স তিরিশের কম এমন উদ্যোগী ও সমাজ পরিবর্তনকারীদের (চেঞ্জমেকার) নিয়ে প্রতি বছর তালিকা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস। গত বছর ‘ফোর্বস: ৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া’ তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী ফুটবলার কারিশমা আলী।যে তালিকায় রয়েছেন নাওমি ওসাকার মতো টেনিস সুপারস্টারও।সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাতকারে নিজের গল্প বলেছেন কারিশমা আলী। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের জন্য এখানকার (চিত্রল ভ্যালি) জীবন কঠিন। বিশেষ করে যারা একটু ভিন্নভাবে তাদের জীবন নিয়ে ভাবে। সমাজের গণ্ডি পেরিয়ে ভিন্ন কিছু করতে চায়। তবে আমার বাবার কারণে আমি ছিলাম ব্যতিক্রম। আমার বয়স যখন আট, ভাবতাম সমাজে অনেক কিছুই ঠিকঠাক নেই। অনেক কাজ যেগুলো ছেলেরা পারে মেয়েদের কেন সেগুলো করতে দেয়া হয় না? আমি ভাবতাম, নারীদের যদি সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে তারা অনেক কিছুই করে দেখাতে পারবে। আমি পরিবারের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি। আমার বাবা কখনো আমাকে কোনোকিছুতে আটকায়নি। ২০০৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার সময় আমার মনে ফুটবলার হওয়ার বাসনা জাগে। আমি খেলাটার প্রেমে পড়ে যাই।সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন কারিশমা আলী। তার জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর চিত্রল উপত্যকার মানুষের মাঝে জন্ম দিয়েছিল বিস্ময়। বাহ্বা পেয়েছিলেন কারিশমা। তবে কিছু মানুষ তাকে গালমন্দও করেছে। এমনকি হত্যার হুমকিও পেয়েছেন। ওসব কখনো কানে তোলেননি তিনি। চিত্রল উপত্যকা অবস্থিত আফগানিস্তান সীমান্তঘেঁষা খায়বর পাখতুনখোয়া অঞ্চলে। সেখানকার মেয়েরা শিক্ষাদীক্ষা ও খেলাধুলায় অনেক পিছিয়ে। কিন্তু সমাজের বাঁকা দৃষ্টি এড়িয়ে ঠিকই লক্ষ্যে পৌঁছে যান কারিশমা। চিত্রল ভ্যালি থেকে উঠে আসা প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন পাকিস্তান জাতীয় দলে। র‌্যাম্পে হেঁটেছেন (ক্যাট ওয়াক) গত বছর মিলানের ফ্যাশন উইকে। প্রদর্শনীতে কারিশমা আলী চিত্রল উপত্যকার বুটিকস ও হস্তশিল্প তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর কাছে। শুধু পাকিস্তানের নয়, সমগ্র বিশ্বেরই সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আইকন হয়ে উঠেছেন তিনি।  কারিশমা  বলেন, যখন মাঠে নামি। পায়ে বল ছুঁই। পেছনের সব সমস্যা, সব প্রতিবন্ধকতা ভুলে যাই। বাবার সহায়তায় চিত্রল ভ্যালিতে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন কারিশমা আলী। ২০১৮তে মেয়েদের জন্য একটি স্পোর্টস একাডেমি এবং হস্তশিল্পের একটি প্রতিষ্ঠানও গড়েছেন। কারিশমা বলেন, ‘চিত্রল অ্যাম্ব্রয়ডারি ও হস্তশিল্প খুবই ইউনিক ও বিখ্যাত। আমাদের মেয়েরা সেগুলো তৈরি করছে কিন্তু বাইরে বিক্রি করে আয় করতে পারছে না।’ করোনা মহামারিতে দুস্থদের সহযোগিতাও করেছেন কারিশমা আলী। এক সময় যাদের কাছে ছিলেন চোখের বালি, তাদের অনেকের কাছেই এখন কারিশমা চোখের মণি। তথাকথিত রক্ষণশীল সমাজের ভুল ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে কারিশমা। দেখিয়েছেন দিন বদলে পুরুষের পাশাপাশি ভূমিকা রাখতে জানে নারীরাও।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please