আজ [bangla_date], [english_date]

বরিশালের দুই লঞ্চের সংঘর্ষে মা-ছেলে নিহত

দুই লঞ্চের সংঘর্ষে মা ও ছেলে নিহত

বরিশাল প্রতিনিধি : মেঘনা নদীতে ঘণ কুয়াশার কারণে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের সংঘর্ষে মা ও ছেলে নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভান্ডারিকাঠী গ্রামের রুবেল হোসেনের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন (২৭) ও তার ছেলে মোমিন (৬)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু। এর আগে রোববার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে কীর্তনখোলা-১০ ও এমভি ফারহান-৯ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি বরিশাল নদীবন্দর থেকে রাত নয়টার দিকে সাতশ’ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে এবং পিরোজপুরের হুলারহাট থেকে ফারহান-৯ লঞ্চটিও ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। লঞ্চ দুটি বরিশালের হিজলা উপজেলা সংলগ্ন মেঘনা নদীর মাঝেরচর এলাকায় পৌঁছলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা সদরঘাট নৌ থানার ওসি রেজাউল করিম ভূঁইয়া যাত্রীদের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, কীর্তনখোলা-১০ চাঁদপুরের কাছাকাছি এসে ঘণকুয়াশার মধ্যে চরে আটকে যায়। এ সময় ফারহান-৯ লঞ্চটি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে সজোরে ধাক্কা খায়। কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. ঝন্টু জানান, এমভি ফারহান-৯ এর ধাক্কায় কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের নিচতলা ও দোতলার অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাটি মাঝনদীতে ঘটেছে। কীর্তনখোলা লঞ্চের ব্যবস্থাপ বেল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, ফারহান-৯ লঞ্চে কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকার কারণেই ঘণকুয়াশার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের উপরিভাগের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তলা ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় হতাহতদের নিয়ে লঞ্চটিকে নিয়ে চাঁদপুর হয়ে সোমবার সকাল নয়টার দিকে ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছেছে। শহিদুল ইসলাম নামের কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের এক যাত্রী জানান, রাত ১২টার দিকে মেঘনা নদীতে তাদের বহনকারী লঞ্চ পৌঁছলে আকস্মিক বিকট শব্দ আর ঝাঁকুনিতে সবাই কেঁপে ওঠেন। আতঙ্কিত যাত্রীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। এরপর তারা নিশ্চিত হন অন্য একটি লঞ্চ তাদের বহনকারী লঞ্চের উপর হুমড়ে পরেছে। দুর্ঘটনার সময় লঞ্চের নিচতলার ডেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন রুবেল। বাকেরগঞ্জের গারুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাইফুজ্জামান জানান, রুবেল পেশায় একজন গাড়িচালক। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকাতেই থাকেন। শীতের ছুটিতে কয়েকদিন আগে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরার পথে তারা দুর্ঘটনায় পরেন। এতে রুবেলসহ ২০জন যাত্রী আহত হন। চাঁদপুর নৌ-পুলিশের ওসি আবু তাহের জানান, লঞ্চের স্টাফরা ঠিক কোথায় দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বলতে পারছেন না। সংঘর্ষে দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন, ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে চাঁদপুরে আহতদের নামিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পরে লঞ্চটি চাঁদপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার পর গুরুতর আহতদের চাঁদপুর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকেরা মাহমুদা খাতুন ও তার ছেলে মোমিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপর গুরুত্বর আহত নুরজাহান বেগমকে (২২) সোমবার সকালে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ও আইফুলা বেগম (৬৫) ও হযরত আলীকে (৭০) চাঁদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক মো. সেলিম বলেন, লঞ্চটি আপাতত জব্দ করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ দুটির সুরতহাল তৈরি করেছে। মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহতদের বাড়ি বাকেরগঞ্জে। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। একইসাথে ফরহান লঞ্চের মাস্টার ও চালককে গ্রেফতারসহ লঞ্চ আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে আগামি সাত কর্মদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ (চেয়ারম্যান) বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে দায়ী ফারহান লঞ্চের মাস্টার ও চালককে গ্রেফতারসহ লঞ্চটি আটকের জন্য পিরোজপুর জেলার পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। মাষ্টার ও সুকানি আটক সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পিরোজপুর সদর থানার ওসি নুরুল ইসলাম বাদল জানান, ফারফান-৯ লঞ্চের মাস্টার (দ্বিতীয় শ্রেনী মর্যাদার) আফতাব হোসেন ও সুকানি আবদুল হামিদকে পিরোজপুর সদর থানাধীন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাদের আটক করে থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। একইসাথে ফারহান-৯ লঞ্চটি স্থানীয় থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া লঞ্চটির চলাচল বন্ধ থাকবে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page