আজ [bangla_date], [english_date]

১৫ জুনের পর হজ নিয়ে সিদ্ধান্ত

নিজেস্ব প্রতিনিধি :  আয়োজক দেশ সৌদি আরব আগামী ১৫  জুনের মধ্যে এ বছরের হজ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। প্রতিমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আয়োজক দেশ হিসেবে তারা হজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা আমাদের পরবর্তী সময়ের সিদ্ধন্ত নেব। আমরা যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত‘- উল্লেখ করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হজযাত্রীদের নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া এরমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ সংক্ষিপ্ত নোটিশে হাজিদের পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে এবং সৌদি সরকারের এখনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ার কারণে হজ যাত্রী নিবন্ধিত সংখ্যা অনেক কম হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, মহামারিজনিত কারণে সৌদি আরব যদি এই বছর হজ জামাত আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেয় তবে নিবন্ধিত প্রার্থীরা পরের বছর অগ্রাধিকার পাবে। আবদুল্লাহ বলেন, ‘যারা এর মধ্যে হজের জন্য অর্থ জমা দিয়েছেন তাদের চিন্তার দরকার নেই। আপনি পরের বছর অগ্রাধিকার পাবেন। আগামীবার না যেতে চাইলেও তার টাকা ফেরত পাবেন। এ বিষয়ে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজের নিবন্ধন শেষ করে আমরা প্রস্তুত আছি। এবারের হজ হবে কি, হবে না বলাটা খুবই কঠিন (টাফ) উল্লেখ করে হাব সভাপতি বলেন, ‘সৌদি সরকারে সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে এ বছর হজ হবে কি, হবে না। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে বাংলাদেশের হজের কোটা এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন । এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার । তবে, করোনার কারণে এ বছর নিবন্ধিত ৬৪ হাজার ৫৯৪ জনের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ৫৯৪ জন নিবন্ধন করেছেন। সরকার কর্তৃক পরিচালিত প্যাকেজ-৩-এর আওতায় ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রিসভা হজ প্যাকেজ- ২০২০ খসড়া অনুমোদন করে, যেখানে একজন অভিজাত হজযাত্রীর ন্যূনতম ব্যয় তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মার্চে, সৌদি আরব বাংলাদেশকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হজ সম্পর্কিত কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়।

এই বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই (৯ জিলহজ) হজ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অতীতে হজ বাতিল ও তার কারণ :

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। গতকাল শুক্রবার অবধি দেশটিতে ৯৫ হাজার ৭৪৮ জন আক্রান্তের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে হজ বাতিল করা মানে বিশ্বজুড়ে দেশ ও বহু ব্যবসায়ের জন্য ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। লাখ লাখ মুসলমান প্রতি বছর এই দেশটিতে যান এবং ১৯৩২ সালে সৌদি কিংডম প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই হজ জামাত বাতিল করা হয়নি। তবে বিদ্যমান মহামারির মতোই প্লেগ ও কলেরা রোগ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইতিহাসে হজ বাতিলের ঘটনা আগেও ঘটেছে। বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, প্লেগ ও কলেরা রোগের মহামারির কারণে প্রথমবারের মতো ৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে এবং ফাতিমিদ সাম্রাজ্যের আমলে ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে খরা ও দুর্ভিক্ষের ফলে হেঁটে হজ পালন বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে, উনিশ শতকজুড়ে একাধিকবার হজ চলাকালীন সময়ে কলেরার প্রকোপে হাজার হাজার হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন। ১৮৫৮ সালে পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনায় কলেরা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মিসরীয়কে লোহিত সাগরের সীমান্তে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। তাদের দেশে ঢুকতে দেওয়ার আগে কোয়ারেন্টিনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। ঊনিশ শতকের বেশিরভাগ সময়ে এবং ২০ শতকের শুরুতে কলেরা মহামারিতে পরিণত হয়েছিল এবং বেশ কয়েক বছর হজ বাতিলে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। প্লেগের কারণেও ইতিহাসে হজ বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। ১৮৩১ সালে ভারতে কলেরা মহামারি হিসেবে দেখা দিলে হজ পালনে গিয়ে যাত্রাপথে হাজার হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। এমন বাস্তবতায় ঘন ঘন মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে প্রায়ই হজ বাতিলে ঘটনা ঘটে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page