আজ [bangla_date], [english_date]

সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক, তালিকায় শোভন-রাব্বানী ও ৫ এমপিসহ ১০৫ জন

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, কাস্টমস কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ ১০৫ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।রোববার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) পাঠানো চিঠিতে এ অনুরোধ করে দুদক। একই সঙ্গে সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। আজ সোমবার এ তথ্য জানা গেছে। ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ দুই নেতা ছাড়াও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে সংগঠনটির আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিদ্দিকী নাজমুল আলমের বিরুদ্ধেও। দুদক কর্মকর্তারা জানান, ছাত্রলীগের তিন নেতাসহ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে সংস্থাটি। অনুসন্ধান দলের প্রাথমিক তদন্তের ফল হিসেবে শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপ্রদর্শিত ও অবৈধ সম্পদের তথ্য হাতে পেয়েছে দুদক। সে তালিকা অনুযায়ী, এবার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধ ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান। অনুসন্ধানে এসব ব্যক্তির ব্যাংকসংশ্লিষ্ট হিসাব যাচাই করা প্রয়োজন বলে মনে করছে দুদক। সেজন্য দুদক বিএফআইইউর কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লেনদেনের তথ্য চেয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অবৈধ ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরুর পর কমিশনের কাছে এ ধরনের অনেক অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য যাচাই করে গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট ১০৫ জনের নাম বাছাই করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানে ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিএফআইইউর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান দলের তালিকায় চারজন বর্তমান ও একজন সাবেকসহ পাঁচজন সংসদ সদস্যের নাম রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী সায়মা আফরোজ এবং সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান। তালিকায় থাকা ঢাকা সিটির কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন-ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঈনুল হক মঞ্জু। তালিকায় রয়েছে-ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম সিদ্দিকী ও গোলাম রাব্বানী এবং ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম সোহেলের নাম।এছাড়া যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির চৌধুরী ও ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহ-সভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন স্বপন, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, তার স্ত্রী সানজিদা রহমান, যুবলীগ নেতা গাজী সরোয়ার বাবু, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহ-সভাপতি মুরসালিক আহমেদ, তার মা আছিয়া বেগম, বাবা আবদুল লতিফ ও স্ত্রী কাওছারী আজাদ, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা কামরান প্রিন্স মোহাব্বত, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, যুবলীগ নেতা আতিয়ার রহমান দীপু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান হোসেন খান, সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক তসলিম উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কায়সার আহমেদ, যুবলীগ ঢাকা উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পীর নামও রয়েছে দুদকের তালিকায়। সূত্র জানায়, তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন মিয়া, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক ভূঁইয়া, ঢাকার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাতেনুল হক ভূঁইয়ার নাম। আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, তার স্ত্রী পারভীন সুলতানা, মেয়ে নুজহাত নাদিয়া নীলা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কে এস মাসুদুর রহমান, তার বাবা আবুল খায়ের খান, মা রাজিয়া খান, স্ত্রী লুৎফুন নাহার লুনা, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের নামও রয়েছে দুদকের তালিকায়। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও নাদিমের সম্পদেরও অনুসন্ধান করবে দুদক। এর আগে দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারক কর্মকর্তা ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে সাত সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক।র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন অবৈধ ক্যাসিনো ও অন্যান্য সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। দুদক ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে ৩০ সেপ্টেম্বর। এজন্য পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। পরে আরও দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় দলে। ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৪টি মামলা করেছে দুদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please