আজ [bangla_date], [english_date]

রাস্তা বন্ধ করে তুলে দেওয়া হয়েছে দেওয়াল রাস্তায় লাগানো হয়েছে গাছ

সভ্যতার যুগে এ কেমন বর্বরতা ?

বিশেষ প্রতিনিধি :  আধুনিক সভ্যতার যুগে এ কেমন বর্বরতা ? ভূমি জালিয়াতচক্র জনচলাচলের ব্যস্ততম রাস্তায় ক্ষমতার জোরে উচু ইটের প্রাচীর তুলে দেড় শতাধিক পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছে। গত ৯ দিন যাবত এসব পরিবারের সদস্যরা বাসা বাড়ি থেকে বাইরে বেরুতে পারছেন না, বাইরে থাকা পরিবারের সদস্যরাও ফিরতে পারছেন না নিজের বাড়িঘরে। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার জোয়ার সাহারা এলাকায় রাস্তার উপর দেয়াল তুলে দেড় শতাধিক পরিবারকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। গত ২০ মে থেকেই এসব পরিবারের সদস্যরা বাড়িঘরে ঢুকতে পারছেন না, আর যারা বাড়িতে ছিলেন তারা রীতিমত বন্দীদশায় আটকে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা যৌথভাবে চাঁদা তুলে এর আগে অনলাইন গ্রুপ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে নগদ ৫০ লাখ টাকা দিয়ে রাস্তার জায়গাটি কিনলেও তা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে নানারকম টালবাহানা করতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে টানা ছয় বছর জটিলতা পোহানোর পর ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জনৈক শফিকুর রহমানের কাছ থেকে পৌণে দুই কোটি টাকায় রাস্তা বাবদ জায়গা কিনে তা ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু ঈদপূর্ব ২০মে রাত ১০টার দিকে অনলাইন গ্রুপের এমডি আক্তারুজ্জামান ও তার সহযোগী আজাদ, কাইয়ুমসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসীর পাহাড়ায় রীতিমত ইটের দেয়াল তুলে জনচলাচলের রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে বাইরে থাকা বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ও জমিতে যেতে পারছেন না, অন্যদিকে বাড়িতে থাকা লোকজন বন্দী হয়ে পড়েছেন। এরপর থেকেই জোয়ার সাহারা মৌজাভুক্ত এসএ ৫৯০, আর এস ৭৬২ এবং সিটি জরিপের ৩৪৩৫৯, ৩৪৩৬০ নং দাগসহ কয়েকটি দাগের জমিতে বসবাসকারীরা সম্পূর্ণ জিম্মিদশার মুখে পড়েছেন। এ ব্যাপারে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ভুক্তভোগিদের পক্ষে সাধারণ ডাইরি করা হলেও এ পর্যন্ত কোনো সুফল মিলছে না বলে জানা গেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, ইসিবি চত্ত্বর থেকে কালশী মুখী প্রধান সড়ক থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিশ ফুট চওড়া একটি রাস্তা নেমে গেছে। ওই রাস্তা ব্যবহার করে মাটিকাটা, পশ্চিম মাটিকাটা, ভুইয়াবাড়ি, টোলারটেক, ভাষানটেক, ধামালকোট এলাকায় যাতায়াত করতেন মানুষজন। কিন্তু ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক। টিপু খানের বাড়ি ঘেঁষে হঠাত করেই ইটের দেয়াল তুলে রাস্তাটি পুরোপুরি জনচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া ও আজগর শেখ জানান, ওই রাস্তা আটকে দেবার কারণে এখন সেখানে বসবাসরত দুই শতাধিক পরিবারের লোকজনকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে,আগে কালশী সড়কে যেতে দুই মিনিট লাগতো এখন বিশ মিনিট লাগে। অপর বাসিন্দা দুদু মিয়া, এনামুল হকসহ কয়েকজন বলেন, এ এলাকার বেশিরভাগ জায়গাই ছিল বিল-ঝিল, গভীর ডোবা। অনলাইন গ্রুপসহ কয়েকটি হাউজিং কোম্পানি নানাভাবে কাগজপত্রাদি প্রস্তুত করে বেশিরভাগ জায়গা জমির মালিক বলে দাবি করে আসছেন। প্লটে, খালে, বিলে সর্বত্র তাদের সাইনবোর্ড ঝুলছে। পাশাপাশি এসব হাউজিং কোম্পানির নিয়োজিত দালাল ও ভাড়াটে দুর্বৃত্তরা গোটা এলাকায় রীতিমত রামরাজত্ব কায়েম করে চলছে। তারা নিয়মিত এলাকায় মহড়া দেয়, জমির প্রকৃত মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি চালিয়ে আসছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তা বন্ধ করে গড়ে ওঠা দেওয়ালটি পাহারা দেবার জন্য গুন্ডা প্রকৃতির ১০/১২ জন সেখানে সার্বক্ষণিক অবস্থান করছে। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ায় থাকা যুবকরা হচ্ছে অলাইন গ্রুপের ভাড়াটে সন্ত্রাসী। রীতিমত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা সেখানে অবস্থান করছে বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। কাউকে সেখানে এগিয়ে ঘেতে দেখলেই পাহাড়ায় থাকা দুর্বৃত্তরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। সাংবাদিকরা রাস্তার উপর দেয়াল নির্মানের ছবি তুলতে গেলেও সংশ্লিষ্ট দুর্বৃত্তরা বাধা দিচ্ছে এমনকি ক্যামেরা নিয়ে টানাহেচড়া পর্যন্ত করার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এলাকার অপর একটি সূত্র জানায়, গভীর খাদ থাকাবস্থায় সেখানে মালিকানা দাবি করে অনলাইন গ্রুপের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়। এ অবস্থায় পেছন দিকে বাড়িঘর গড়ে তোলা বাসিন্দারা অলাইন গ্রুপকে প্রথম দফায় ৫০ লাখ টাকা প্রদানের বিনিময়ে মাটি ভরাট করে এই রাস্তাটি নির্মান করে। কিন্তু মাটি ভরাটের পর অনলাইন গ্রুপের এমডি জায়গাটি আর দলিল করে দেননি। ছয় বছর হয়রানি পোহানোর পর পুনরায় এলাকাবাসীর সমন্বয়ে এক সমঝোতা বৈঠকে একই রাস্তা বাবদ পুনরায় হাউজিং কোম্পানিকে পৌণে দুই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এরপরও রাস্তার জায়গাটি দলিল করে দিতে গড়িমসি করতে থাকেন অনলাইন গ্রুপের এমডি আখতারুজ্জামান। এরইমধ্যে গত ২০ মে হঠাত করেই এমডি আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে জনচলাচলের রাস্তায় ইটে দেয়া তুলে মুহূর্তেই বন্ধ করে দেয়া হয়। ভুক্তভোগিরা প্রশ্ন তুলে বলেন, যখন টাকা বুঝিয়ে দিয়ে মাটি ভরাট করে রাস্তাটি নির্মান করা হয় খন অনলাইন গ্রুপ পক্ষে ছিল। কিন্তু দিন দিন জায়গার দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হওয়ায় দুই দফায় সোয়া দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরই প্রতারণার জাল ফেঁদে বসেছে অনলাইন গ্রুপ কোম্পানি। অবশ্য অনলাইন গ্রুপের পক্ষ নিয়ে কয়েকজন দালাল বলেছেন, রাস্তার জায়গা বাবদ কোনো টাকা পয়সা অনলাইন গ্রুপকে দেওয়া হয়নি। বরং পেশীশক্তির বলে এলাকাবাসী কোম্পানির বিপুল পরিমাণ জায়গা জবর দখল করে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে। এ ব্যপারে অলাইন গ্রুপ একাধিক মামলা মোকাদ্দমা দায়ের করে বলেও দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অনলাইন গ্রুপের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, রাস্তা বাবদ অনলাইন গ্রুপ কারো থেকে কোনো টাকা পয়সা গ্রহণ করেনি। কিন্তু ভুক্তভোগী লোকজনের কাছে অনলাইন গ্রুপের এমডি আক্তারুজ্জামানকে প্রথম কিস্তির ৫০ লাখ টাকা দেয়ার ব্যাংক চেক পর্যন্ত রয়েছে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please