আজ [bangla_date], [english_date]

শুরু হয়েছে চাল নিয়ে চালবাজি

নিজেস্ব প্রতিনিধি : এবার বোরোর বাম্পার ফলন হলেও দেশের চালের বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববাজারে চালের দাম কমলেও বেশি মুনাফার লোভে দেশে মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে।  অটোরাইস মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। অটোরাইস মিলগুলো লাখ লাখ মণ ধানের মজুদ করে বাজার নিজেদের আয়ত্তে রেখেছে। সম্প্রতি তারা চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে চিকন ও মাঝারি মানের চাল প্রকারভেদে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার দ্রুত মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা চালের বাজার অস্থিতিশিল করে তুলবে। তবে অটোরাইস মিল মালিক সমিতির মতে, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। চাল বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী ও অটো রাইস মিল মালিক সারা দেশের চালের ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অটো রাইস মিলের মালিকরা বাজার থেকে একতরফাভাবে ধান সংগ্রহ করে নিজেদের ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছে। বর্তমানে কৃষকদের কাছে ধান নেই। এ সুযোগে কিছুদিনের ব্যবধানেই চিকন, মাঝারি, মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। মূলত করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকার ৪৫টি এলাকা চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে রেড জোন, দেশের ১০ জেলা এবং বিভিন্ন জেলার কিছু এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন দেয়া হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও চালের দাম বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চিকন চালের দাম ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মোটা চলের দাম ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজির চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৬৮ টাকা; যা আগে ছিল ৫২ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা; যা আগে ছিল ৪৪ থেকে ৫২ টাকা। আর মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা; যা আগে ছিল ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা। দেশের বাজারে চালের এমন দাম বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে চালের দাম কমছে। গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমেছে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে কমেছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। দেশে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে মোট ৪৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। তার বাইরেও স্থানীয় জাতের নানা ধানের আবাদ হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রতি হেক্টরে গড়ে ৪ দশমিক ২০ টন করে মোট ২ কোটি লাখ টন। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অটো রাইস মিল মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা ধানের জন্য আগাম ব্যাপারিদের টাকা দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে গুদামজাত করে রেখেছে। ফলে এখন ধানের দাম মণপ্রতি এক থেকে দেড়শ টাকার বাড়লেও কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। ধানের বাড়তি মূল্যে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। গত কয়েক বছরে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে দুই হাজারের বেশি মিল মালিকের নাম কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও দীর্ঘদিনেও কারো বিরুদ্ধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিমত, সিন্ডিকেটধারী ও কালো তালিকাভুক্ত মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এভাবে যখন তখন চালের দাম বাড়িয়ে দেয়ার সাহস তারা পেত না। সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই চাল বিক্রি বেড়ে যায়। তাতে দামও বাড়ে। নতুন চাল বাজারে এলে ঈদের আগে দাম কিছুটা কমে। এখন আবার দাম বাড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরিবের চাল হিসেবে পরিচিতি মোটা চালের দাম বেড়ে কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে। এদিকে চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও নওগাঁর রাজু অটো রাইস মিলের কর্ণধার এরফান আলী জানান, অটো মিলগুলোর কাছে চালের দাম বাড়েনি। খুচরা বাজারে চালের দাম উল্টাপাল্টা করছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, সারা বিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কে নিমজ্জিত। এটাকে পুঁজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ন্যূনতম ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা থাকলে কোনও অবস্থায় এই সমস্যাকে পুঁজি করে মিল মালিক ও ব্যবসায়ী দাম বাড়াতে পারে না। সরকারের মনিটরিং চলছে, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page