আজ [bangla_date], [english_date]

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও আদালতের রায়ের পরও চিত্র পাল্টাচ্ছে না

শিক্ষকদের বইয়ের ব্যবসা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি :

ঝালকাঠির বেসরকারি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি নির্ধারিত পাঠ্য বইয়ের বাইরেও অতিরিক্ত বই পাঠ্য করা হচ্ছে। অতিরিক্ত পাঠ্য করা বই শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করার জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রকাশনী কোম্পানি থেকে কমিশন নিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বই’র ব্যবসা করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। রুহুল আমীন বশির নামে এক অভিভাবক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তার ফেসবুকে “ আমার ছেলের স্কুলে নতুন নিয়ম। স্কুল লাইব্রেরি থেকে বই কিনতে হবে বোর্ড বই ব্যতীত)। কোচিং তো আছেই। হায়রে বাণিজ্য !! লিখে একটা স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিভিন্নজনে নানান ধরনের মন্তব্য করেছেন। এতে সুনীল সরকার নামে একজনে লিখেছেন, “কেনো-বাইরে থেকে কিনলে দোকানি লাভ ছাড়া বই দেয় নাকি? তা ছাড়া বই কেনার সকল ঝক্কির ও অবসান! বিষয়টি ইতিবাচক ভাবুন না।” রিপ্লাইতে তিনি বলেছেন, “প্লে শ্রেণি থেকে কেজি ২ পর্যন্ত বোর্ড বইয়ের বাইরে সব বই প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে হয়। লাইব্রেরি থেকে কিনলে একটা কমিশন দিয়ে কিছু টাকা কম রাখে। কিন্তু ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কিনলে মোটেও কম নেই। বইয়ের গায়ে যে মূল্য লেখা আছে সেই নির্ধারিত মূল্যেই বই কিনতে বাধ্য করা হয়।” ট্রাভেল্স ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম লিটন জানান, “গার্ডিয়ানরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের কাছে পড়াইতে দেয়। তাদের কাছে না পড়লে পরীক্ষায় খাতায় মার্ক জোটে না। প্রত্যেক ক্লাস এর ক্লাস টিচারদের সাথে আর এক ক্লাস টিচারদের যোগাযোগ রক্ষা করে এই বাণিজ্য চালায়। তাদের কাছে কোচিং করলে সে ছাত্র ভালো হোক মন্দ হোক পাশ।” শাম্মি রহমান নামের এক অভিভাবক মন্তব্য করেন, “প্রতিবাদ করেন।যদি না কেনেন তা হলে কি করবে? স্কুল থেকে বেড় করে দেবে, পড়াবেন না ওখানে। কি হবে? কিন্তু এধরনের সস্তা রসিকতা সহ্য করা সম্ভব না। জানা গেছে, শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য উন্নত দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতও শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের চাপ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। শ্রেণি অনুসারে বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে নির্ধারণ করার পাশাপাশি ভারত শ্রেণিকক্ষে বইবিহীন শিক্ষা প্রকল্প শুরু করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ এমনকি আদালতের রায়ের পরও বাংলাদেশের শিশুদের কাঁধ থেকে নামছে না বইয়ের বোঝা। অসংখ্য পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে হাফ ডজন পর্যন্ত অনুমোদনহীন বই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর। ফলে প্রতিনিয়ত ভারি বইয়ের ব্যাগ পিঠে নিয়ে চলতে দিয়ে একদিকে যেমন মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে শিশুরা দীর্ঘমেয়াদী নানা রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা । শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকরা শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের বোঝা কমানোর তাগিদ দিয়ে বলেছেন, উন্নত দেশের মতো শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা বইহীন করা না গেলেও যেকোনো উপায়ে বইয়ের সংখ্যা কমানো জরুরী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন বই চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরো সক্রিয় হতে হবে। প্রতিনিয়ত ভারি বইয়ের বোঝা কাঁধে বহন করার কারণে শিশুরা আর্থরাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে যাবে, যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পাঠ্যবইয়ের বোঝা কমাতে একটি বইয়ের মধ্যে দুই থেকে তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করারও প্রস্তাব দিয়েছেন। শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে সরকারি নির্দেশ মেনে কেবল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অনুমোদিত বই পড়ানো হয়। কিন্তু সরকার অনুমোদিত বই হলেও রক্ষা নেই শিশুদের। ষষ্ঠ শ্রেণির একটি শিশুকে পড়তে হচ্ছে ১২ বিষয়। যার জন্য পাঠ্যবই রয়েছে সমপরিমাণে। সারাদেশে সরকার এই শ্রেণিতেই একজন শিশুকে পড়তে হচ্ছে বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র। কৃষি শিক্ষা, অঙ্ক, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ধর্ম, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এবং সমাজ। শিশুদের এক ডজন বই ও সমপরিমাণ খাতা নিত্যসঙ্গী। এর সঙ্গে যুক্ত আছে প্রতিটি বিষয়ে ভালো করার জন্য শিক্ষকদের দেওয়া কোচিং পড়ার চাপ। বিষয় ভিত্তিক কোচিং যাঁরা করেছে শিক্ষক তাদের প্রত্যেককে ৯০ বা তার ওপরে নম্বর দিয়েছে সর্বশেষ পরীক্ষায়। কিন্তু যাঁরা কোচিং করে নি তাদের শিক্ষক ৬০ নম্বরের বেশি দেননি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। প্রত্যেক অভিভাবকই বলছেন, একটি অসংখ্য বইয়ে চাপ তার ওপর কোচিং করার জন্য চাপ সহ্য করতে না পেরে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পরে প্রায়ই। প্রতিদিন ১২ বিষয়ের ক্লাস না হলেও অন্তত সাতটি ক্লাস হয়। সে ক্ষেত্রে সাতটি বই, সাতটি খাতা, কলম, পানির বোতল, খাবারসহ প্রত্যেক শিশুদের একটি বিশাল ব্যাগ বহন করতে হয় প্রতিনিয়ত। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পার হলেই শুরু হয় অসংখ্য অনুমোদনহীন বই পড়ানোর চাপ। ফলে প্রত্যেক শ্রেণিতে সরকার অনুমোদিত বইয়ের বাইরেও কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেওয়া অনেক বই পড়তে বাধ্য হয় শিশুরা। বেসরকারি স্কুল বিশেষত শহরাঞ্চলের কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের ১৩ থেকে ১৪টি বিষয়ও চাপিয়ে দেওয়া হয়। এসব বই প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এনসিটিবি প্রতিবছর অনুমোদনহীন এসব বই পড়ানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেও ফলাফল শূন্য। কারণ এ অপরাধ দমনে নেই মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্য কোনো নজরদারি।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page