মোঃ জাফর বাজেটকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটকারীদের আরও সুযোগ বৃদ্ধির বাজেট বলে জানিয়েছেন বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দুপুরে উত্তরার নিজ বাসা থেকে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ বাজেট করোনার সময়ে বীভৎস স্বাস্থ্য সংকটে পড়া মানুষের নাভিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবার বাজেট। কোটি কোটি অনাহারী মানুষকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ঠেলে দেয়ার বাজেট। কৃষিকে ধ্বংস করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলার বাজেট। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার না করে আরও গভীর মন্দায় ফেলে দেয়ার বাজেট। কর্মক্ষম বেকার মানুষকে এবং নতুন করে বেকার হওয়া মানুষকে বেকার রেখে দেয়ার বাজেট। এ বাজেট গরিব মানুষের সুবিধা কমিয়ে ধনীদের সুবিধা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বৃদ্ধির বাজেট। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, এসএমই, গ্রামীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় বরাদ্দের ফলে এদেশের জনগণের মাঝে সীমাহীন হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, যদিও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাহীন একটি একদলীয় সরকারের আচরণে কাল্পনিক সাফল্যের দিবাস্বপ্ন দেখানোর অপপ্রয়াসই স্বাভাবিক। জনগণের কাছে ন্যুনতম জবাবদিহিতাহীন, আমলাচালিত, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট সরকারের কাছে এমন বাজেটই প্রত্যাশিত। এ বাজেট আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ ঘাটতি ৫ শতাংশ। সংখ্যানির্ভর মোহাবিষ্ট এ বিরাট বাজেটের ৬৬ শতাংশ আসবে রাজস্ব আয় থেকে৷ যা একেবারেই অসম্ভব। এ সরকার বাংলাদেশকে একটি লুটেরা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে দাবি করে তিনি বলেন, এ বাজেটে লুটপাটকারী, ধনিকশ্রেণি ও আমলাতন্ত্র-নির্ভর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকে প্রস্তুত হয়েছে এবং তাদেরই স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে। ব্যাংকে আমানত কমে যাচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন, ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার ওপরে রাখলেই ৩ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এক কোটি টাকার ওপরে থাকলে ১৫ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। এতে আমানত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলেও তা পরিবর্তন করা হয়নি। তিনি বলেন, কৃষি ও কৃষক উপেক্ষিত থেকে গেছেন। অথচ এ করোনায় দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে এ কৃষি ও কৃষক। শুধু ভাতের সংস্থান করা নয়, সবজি, মাছ, ডিম, মুরগি, দুধ, মাংস ও ফল কোনো কিছুরই অভাব বোধ করতে দেয়নি যে খাত, গত বাজেটেও তার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাজেট ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। অথচ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপি সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাজেট ছিল মাত্র ৪০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিএনপি সরকারের শেষ অর্থবছরের তুলনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খরচ বেড়েছে সাড়ে নয় গুণ। অর্থমন্ত্রী সরকারি ব্যয় হ্রাস করার যে ঘোষণা বাস্তবায়ন করছে, তা তার একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টান্ত মাত্র। বিশ্ববাজারে তেলের দাম তলানিতে পড়ে গেলেও আমাদের দেশে দাম কমানো হয়নি, আয়করের নতুন নিয়মের ক্ষেত্রে কম আয়ের মানুষের কর যেখানে কমবে ৫ হাজার টাকা, সেখানে একজন ধনীর কমবে আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত, এ বাজেটে মোট রাজস্বে আয়করের হিস্যা বাড়েনি বরং ১ শতাংশ কমেছে, করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা নিশ্চিত হওয়া প্রায় ১৫ লাখ কর্মীর ভবিষ্যতের জন্য রাখা হয়েছে অতি তুচ্ছ বরাদ্দ, বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য নেই কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি, করোনা সংকটের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের একটা পর্যটন খাত নিয়ে দেয়া হয়নি একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও। এ বাজেটে ব্যাংক খাতের ক্যান্সার হয়ে পড়া খেলাপি ঋণ কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিরাট ঋণখেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিল করার পদক্ষেপকে কৃতিত্ব হিসেবে দাবি করা হয়েছে। অথচ এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ওই সব খেলাপিদের আবার নতুন ঋণ নেবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, যেটা আবারও খেলাপি হবে। ব্যাংক খাত সংস্কার এবং ব্যাংক কমিশন গঠনের কিছুই বলা হয়নি।