আজ [bangla_date], [english_date]

ভার্চুয়াল আদালতে বিপুলসংখ্যক জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি

নিজস্ব প্রতিনিধি : করোনা প্রাদুর্ভাবে চলমান কঠোর লকডাউনে ভার্চুয়াল আদালত বিপুলসংখ্যক জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেছে। দুই দফায় ১১৩ কার্যদিবসে ভার্চুয়াল শুনানি নিয়ে অধন্তন আদালত ২ লাখ ৯১ হাজার ৩০০টি জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেছে। আর নিষ্পত্তি হওয়া ওসব আবেদনের বিপরীতে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৪ জন আসামি মুক্তি পেয়েছে। ফলে কারাগারে বন্দির চাপ কমেছে। এমনিতেই দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি রয়েছে। তার ওপর মহামারীর মধ্যেও অপরাধ থেমে নেই। নিয়মিতভাবেই কারাগারে বন্দি আসছে। কিন্তু করোনার এমন পরিস্থিতিতে যদি ভার্চুয়াল আদালতে জামিন আবেদন নিষ্পত্তির সুযোগ না থাকতো তাহলে কারাগারগুলোর চিত্র ভয়াবহ হতো। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা দেশের বিচার বিভাগের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পূর্ণাঙ্গ বিচার কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় অধস্তন আদালতে ওই সুযোগ নেই। আইনজীবীদের মতে, অধস্তন আদালতের ভার্চুয়াল সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি জরুরি। একই সাথে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থায় যেসব আইন প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়েছে দ্রুত ওই আইনগুলো যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। দেশে গত বছরের মার্চ মাসে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। সরকার তখনই বিধিনিষেধ জারি করে। করোনা সংক্রমণ থেকে বিচারক, আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ ও নিম্ন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০’ জারি করে। ওই অধ্যাদেশ জারির পরই প্রধান বিচারপতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অধস্তন আদালতে জামিন সংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন। গত বছর ১১ মে থেকে প্রথম ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। অধস্তন আদালতের পর সুপ্রিম কোর্টের বিচার কার্যক্রমও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চালু করা হয়।

বিগত ১০ মাস ধরে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আপিল বিভাগের বিচার কাজ চলছে। প্রথম দফায় গত বছরের ১১ মে থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৫৮ কার্যদিবস ভার্চুয়াল আদালত চলে। ওই সময়ে সারা দেশে অধস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে ভার্চুয়াল শুনানিতে বিচারকরা মোট ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯টি ফৌজদারি মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেন। তার মধ্যে জামিন পান ৭২ হাজার ২২৯ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পুনরায় ভার্চুয়াল শুনানি নেয়া শুরু হয়। চলতি বছর ১২ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৫ কার্যদিবস ভার্চুয়াল অধস্তন আদালত চলে। ওই সময়ে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬১টি ফৌজদারি মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তি হয়। আর ওসব আবেদনের জামিন পেয়ে ৭৩ হাজার ৭৫ জন বন্দি কারামুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে যতো বন্দি রয়েছে তা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। দেশের ৬৮ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৪৫০ জন। সেখানে বন্দি রয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার। গত বছরের ২০ মে পর্যন্ত সারা দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৯ হাজার। অর্থাৎ করোনার এই সময়ে কারাগারে নতুন বন্দি এলেও মোট বন্দির সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে।

এদিকে আদালতের ভার্চুয়াল পদ্ধতি প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মীদের মতে, করোনা মহামারীর মধ্যে বিচার প্রার্থীরা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন বিচার প্রার্থীদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, অন্যদিকে কারাগারেও বন্দির চাপ কমছে। এমনিতেই দেশের কারাগারগুলোতে সব সময়ই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বন্দি অবস্থান করে। আর করোনাকালেও অপরাধ থেমে নেই। প্রতিদিনই বিভিন্ন অপরাধের মামলায় বহু ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন শুনানির সুযোগ না থাকলে কারাগারের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিতো।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইনজীবীদের মতে, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও জামিন আবেদন শুনানির করার ব্যবস্থা রাখা প্রশংসাযোগ্য। তবে শুধু জামিন শুনানি নয়, মহামারী বা যে কোনো দুর্যোগকালীন বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যেন করা যায় সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেজন্য ভার্চুয়াল আদালতের সক্ষমতা আরো বাড়ানো দরকার।

বিশেষ করে অধস্তন আদালতে দ্রুতগতির ইন্টারনেটসহ প্রয়োজনীয় সব লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থায় বাধা হয়ে আছে তেমন পুরনো আইনগুলোও দ্রুত সংস্কার করে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, করোনা মহামারীর মধ্যেও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে হলেও আদালতের কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারক ও আইনজীবীরা মামলা পরিচালনায় অংশ নিচ্ছেন। তাতে শারীরিক দূরত্বও বজায় থাকছে, আবার বিচার প্রার্থীরাও জামিন আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page