নিজেস্ব প্রতিনিধি : নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। আগামী বছরের মধ্যে দেশের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বা প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওসব এলাকা দেশের ১২ জেলায় বিস্তৃত। তাতে প্রায় ২৪ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারাতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে যমুনা ও পদ্মা পারের পাঁচ জেলার মানুষ। নদী ভাঙনে সড়ক, দোকানপাট, বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার এমনকি হাসপাতাল বিলীন হয়ে যেতে পারে। বিগত ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের ১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। তাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৭ লাখেরও বেশি মানুষ। তবে একই সময়ে পদ্মা, যমুনা ও গঙ্গার অববাহিকায় ৫৮১ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মূলত মে থেকে দেশে নদী ভাঙন শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। গত কয়েক বছরে ভাঙনের কবলে পড়ে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ার প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা। তাতে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বসতভিটাসহ অনেক অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বিগত ২০১৮ সালের ভাঙনে ওই উপজেলার একমাত্র হাসপাতালের অর্ধেকের বেশি নদীতে চলে গেছে। যে কারণে ওই হাসপাতালে বর্তমানে কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না। উপজেলার মানুষ শুধু আউটডোর সার্ভিস পাচ্ছে। পরবর্তীতে সরকার ওই এলাকা রক্ষায় পদ্মা তীরে জিওব্যাগ ফেলে। তবে গত বছরও ভাঙনে ওই এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। চলতি বছর দেশের ১২ জেলার ১৬টি স্থানে ভাঙন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও মাদারীপুর। তবে পূর্বাভাসে শরীয়তপুর বাদ দেয়া হয়েছে। এ বছর শুধু দেশের প্রধান দুই নদী অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মার ১৬টি স্থান ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছর ২২ স্থানে ভাঙনের পূর্বাভাস ছিল। তার মধ্যে ৮০ শতাংশ এলাকা ভেঙেছে। তাছাড়া ২০১৮ সালে ২৯ স্থানে ভাঙনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ২৫ স্থানই ভেঙেছে। পূর্বাভাসের ৮৬ শতাংশই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভূ-উপগ্রহের ছবি, ভাঙনপ্রবণ এলাকার মাটির ধরন পরীক্ষা ও মাঠপর্যায়ের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গবেষণা করে নদী ভাঙন ঝুঁকির স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এবারের মৌসুমে ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা-গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পাড়ে ভাঙন চলতে পারে। তাতে বিপুলসংখ্যক বসতবাড়ি, হাজার হাজার মিটার জেলা, উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কসহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মসজিদ, হাটবাজার, সরকারি ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এবারের নদী ভাঙনের চিহ্নিত স্থানগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী ও সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুর সবচেয়ে বেশি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মূলত পদ্মা, যমুনা ও গঙ্গার অববাহিকায় ভাঙনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য শাখা ও ছোট নদীর ভাঙনের পূর্বাভাস দেয়া হয়নি। তবে বিশেষ করে চাঁদপুর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত মেঘনার শাখা নদীগুলোতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে তেঁতুলিয়ার কারণে পটুয়াখালীর বাউফল, ভোলার বিভিন্ন স্থানে, লোহালিয়ার কারণে বাউফলের কালিশুরী, দুমকীর চরগরবদী, বরিশালে সন্ধ্যা ও সুগন্ধা নদীর কারণে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। এদিকে নদী ভাঙন প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে পূর্বাভাস আমলে নিয়ে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো রক্ষার্থে মৌসুমের আগেই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। মানুষ তাই প্রত্যাশা করে। তাহলে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না। যদিও চিহ্নিত স্থানে লাল পতাকা লাগিয়ে মানুষকে সতর্ক করা হয়। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম জানান, নদী ভাঙন থেকে জনগণকে রক্ষায় সরকার দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ মুহূর্তে নড়িয়ায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক ভাঙন রোধে কাজ করছে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ চলছে। আর বর্তমানে দেশে ধারাবাহিকভাবে নদী ভাঙন কমে আসছে।