নিজস্ব প্রতিনিধি : উত্তরা-তুরাগ এলাকায় গড়ে ওঠা অভিনব বাউন্ডারী বাহিনী ও তার মূল হোতা সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বাউন্ডারী বাহিনীর নানা দৌরাত্ম্য, বেশুমার চাঁদাবাজি, জবর দখল, লুটতরাজের খবরা খবর প্রকাশ হতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিনব এ দুর্বৃত্তপনার তথ্য জেনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রীতিমত অবাক বনে গেছেন। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেছে। ডিএমপি উত্তরা জোনের একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা এ বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে। পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দা উইংয়ের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, উত্তরা মডেল টাউন সম্প্রসারণের শুরু থেকেই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রটি শত শত প্লটে জবরদস্তি বাউন্ডারী নির্মাণের নামে ভয়াবহ চাঁদাবাজির অপকর্ম শুরু করে। অভিনব চাঁদাবাজির প্রক্রিয়ায় চক্রটি এ পর্যন্ত আড়াই সহস্রাধিক প্লট থেকে পাঁচ শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাউন্ডারী নির্মান বাবদ চাহিদা মাফিক চাঁদা হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে অর্ধশতাধিক প্লটও সেলিম বাহিনী দখল করে রেখেছে বলেও ভুক্তভোগিদের সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরা ও তুরাগ থানা এলাকার সম্প্রসারিত উত্তরা টাউন প্রকল্পের প্লটগুলোকে পুঁজি করে অভিনব চাঁদাবাজির দুর্বৃত্তপনা শুরু করেন জনৈক সেলিম মিয়া। নলভোগ এলাকার হাজী কফিল উদ্দিনের ছেলে প্রভাবশালী সেলিম মিয়া তার সহযোগিদের নিয়ে আরো ৭/৮ বছর আগেই বাউন্ডারী বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এ বাহিনীর সেকেন্ড নি কমান্ড হিসেবে রয়েছেন সেলিম মিয়ারই সহোদর কথিত যুবলীগ নেতা তৈয়বুর রহমান। এছাড়াও আরেক সহোদর শফিক, স্থানীয় সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ খ্যাত রাজা, সফুরউদ্দিন, কেরামত আলী, আরিফ, ইব্রাহীম, হুমায়ুন সরকার, সেকেন্দার, শিপলুসহ ১০/১২ জনের নিয়মিত বাহিনী রয়েছে তার। এদের বাইরেও মাটিকাটা শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রী, ইট-বালুর ব্যবসায়ি মিলেমিশে সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলা হয়েছে। সূত্র জানায়, রাজউক থেকে বরাদ্দ পাওয়া কিংবা ক্রয়সূত্রে মালিক হওয়া জায়গা জমি কিছুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেই সেলিম মিয়ার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সদস্যরা সেখানে হামলে পড়ে। তারা সেখানে নিজেদের ইচ্ছেমত মাটি ভরাট, সীমানা নির্ধারন, বাউন্ডারী নির্মান শেষে ইচ্ছেমতই মোটা অঙ্কের বিল হেঁকে বসে। ’বিল’ নামের চাঁদার পরিমাণ এতই বেশি যে, জমি বা প্লট মালিকরা রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমনই একজন ভুক্তভোগী গোপালগঞ্জের সেলিম মোল্লা। তিনি জানান, নলভোগ এলাকায় একখন্ড জায়গা কিনে বড়ই বিপাকে পড়েছেন। তার ওই জায়গায় বিনা অনুমতিতেই বাউন্ডারী নির্মাণ করে এখন ৯৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তিনি নগদ ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে এমনকি সুদে নিয়ে ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেও মুক্তি পাচ্ছেন না। এখনো সেলিম মিয়া তাকে জিম্মি করে আরো ৭৩ লাখ টাকা দাবি করে চলছে। এ চাঁদার দাবিতে অবিরাম হুমকি ধমকি দিচ্ছেন এবং নানা কৌশলে সেলিম মোল্লার সম্মানহানি করে চলছেন। সেলিম মোল্লা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, চাঁদার টাকা আদায় করতে ওই বাউন্ডারী চক্রের সদস্যরা এখন মিডিয়া পর্যন্ত ব্যবহার করে চলছে। ভূইফোঁড় কিছু অনলাইন ও অবৈধ আইপিটিভি যা খুশি প্রচার করে আমার মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিচ্ছে, পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে আমাকে দোষী বানানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ জুলুমবাজি থেকে তিনি রেহাই পেতে উর্দ্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।