আজ [bangla_date], [english_date]

বাংলাদেশ সরকার বোধকরি মানিকগঞ্জে অচল!! সেখানে দুর্জয়ের নির্দেশেই চলে প্রশাসন

সাঈদুর রহমান রিমন : ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জ জেলাটি বাংলাদেশের মানচিত্রভুক্ত থাকলেও সেখানে বোধকরি বাংলাদেশ সরকারের আদেশ-নির্দেশ, নীতি-বিধি খুব একটা পাত্তা পায় না। সেখানে নিযুক্ত দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তারাও সরকারের চাকরি করেন, বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করেন সরকারের কোষাগার থেকেই-কিন্তু দায়িত্ব পালন করেন দুর্জয় এমপি’র। জেলায় সবচেয়ে কম বয়সের (পিচ্চি) এমপি’র আদেশ-নির্দেশ, চাওয়া-পাওয়া পূরণ করাটাই ইশ্বর প্রদত্ত কর্তব্য বলেই মনে করে প্রশাসন। তাইতো সরকারের কঠোর নির্দেশনা অমান্য করেও ‘করোনা কবলিত রেড জোন’ ঘোষিত ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলায় দুর্জয় সমর্থকদের গণজমায়েত, বিক্ষোভ প্রদর্শণসহ মানববন্ধনের নামে মানুষজনের ভীড়-ভাড়াক্কা গড়ে তোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। করোনাক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে মানিকগঞ্জ চরম বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন গোটা জেলাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশনা জারি করেছে। সেই নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাতে জেলার পুলিশ প্রশাসন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জনপ্রতিনিধিরা রাত দিন পরিশ্রম করছেন, প্রতিমুহূর্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জেলার সর্বত্র তারা টহলদানের কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছেন। ঘোষিত রেড জোনের এতসব কড়াকড়ির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি লংঘন করে, সামাজিক দূরত্ব ছিন্ন করে শত শত নারী-পুরুষ-শিশু কিভাবে গাদাগাদি ঠাসাঠাসির জনভিড় গড়লেন? হাতে হাত রেখে, কাধে কাধ মিলিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করলেন কেমন করে? তবে কী মঙ্গলবার ও বুধবার দুর্জয়ের পক্ষ নেয়া অতি উৎসাহী লোকজনের জন্য লকডাউন কি শিথিল করা হয়েছিল? নাকি ওই দুটি দিনের জন্য ‘রেড জোনের ঘোষণাটি’ স্থগিত ছিল? এমপি দুর্জয়ের পক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের ছবিসহ প্রকাশিত খবরা খবরের কোথাও করোনার রেড জোনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যের একটি শব্দও না থাকায় লকডাউন-রেড জোনবিহাল থাকা নিয়ে আমারও সন্দেহ হয়। ধারণা করি-হয়তো আমার অজান্তেই মানিকগঞ্জ করোনামুক্ত হয়ে গেছে, ফলে উঠে গেছে লকডাউন, বাতিল হয়েছে রেড জোনের ঘোষণাও। কিন্তু আলাপচারিতায় জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নিজে থেকেই বলে উঠলেনঃ ‌জেলায় লকডাউনও শিথিল হয়নি, রেড জোনও বহাল ছিল। র‌্যাব -পুলিশ-ডিবির টহল অব্যাহত থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি লংঘন বিরোধী মোবাইল কোর্টও ছিল সচল। তাহলে? এতো মানুষের গাদাগাদি ভীড় তাদের নজর এড়ালো কিভাবে ? আগেরদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে আগাম ঘোষণা দিয়েই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। অতএব এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন কিছু বুঝে ওঠার আগেই জঙ্গী মিছিল শেষ হয়ে যায়’ এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না সেখানে। তবে যা ঘটেছে তা হলো- দুর্জয় বাবাজীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসন মাথা ন্যূয়ে রাখার কারণে এসব অন্যায় অপরাধ তাদের চোখেই পড়েনি। আসলেই তো, পীর-দরবেশ, ঠাকুর, গুরুজীর সামনে দাঁড়ানো ভক্তি শ্রদ্ধায় গদগদ ভক্তের চোখ শুধু পা দর্শণেই পুলকিত বোধ করে। সে ভক্তের চারপাশে দৃষ্টি ফেলার সুযোগ কোথায়? দুর্জয় এমপির প্রতি এমন ভক্তিতে গদগদ না থাকলে প্রশাসনের বিনা বাধায় রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিধি সংঘবদ্ধভাবে লংঘনের সুযোগ পায় কিভাবে? প্রশাসনের অজ্ঞতা, ব্যর্থতা, তৎপরহীনতার সুযোগে অপরাধীচক্র দলবদ্ধভাবে অপরাধ সংঘটন করতেই পারে- কিন্তু সেই অপরাধ সংঘটনের পর কী প্রশাসনের আর কোনো দায়িত্বই থাকে না? অবশ্যই থাকে। কারা অপরাধ ঘটালো তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনী শাস্তির আওতায় আনাটা প্রশাসনের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধতার শপথ করেছেন, অঙ্গিকারবদ্ধ আছেন। মানিকগঞ্জের জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সেই অঙ্গিকারবদ্ধ দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন বলেই প্রশ্ন উঠেছে, বলা হচ্ছে তারা কী সরকারের আজ্ঞাবহ নাকি দুর্জয়ের ? মাননীয় এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়-বিণয়ের সঙ্গে আপনাকেই বলছি ——- একদা তারুণ্যদীপ্ত নাঈমুর রহমান দুর্জয় অনেকের কাছেই ছিলেন সম্ভাবনার প্রতীক। সেই সম্ভাবনা বিনষ্ট হতেই পারে- তাতেই কী হাল ছেড়ে দিতে হয়? মোটেই না। বরং আরেকটি সম্ভাবনার স্বপ্ন প্রদীপ জ্বালিয়ে মেধা খাটাতে হয়, শ্রম দিতে হয়। এমপি মহোদয়, আপনার প্রতি আন্তরিক সম্মান জানিয়েই বলছি-জাতীয় পর্যায়ের অনেকগুলো গণমাধ্যমে আপনার কর্মকান্ড নিয়ে সুনির্দ্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন তুলেছে। বলা হয়েছে এমপি হওয়ার আগেও স্বামী-স্ত্রীর চাকরির আয়ে আপনাদের জীবিকা নির্বাহ হতো। কিন্তু সেই আপনি কিভাবে পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিক বনে গেলেন-কোথায় পেলেন এতো টাকা ? প্রশ্ন তোলা হয়েছে-আপনার নির্বাচনী এলাকায় ত্যাগী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের হটিয়ে দলে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামায়াতীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন, বিভিন্ন শাখা ও ইউনিট কমিটিতে তাদেরকে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী? সেসব প্রশ্নের সত্য সঠিক ব্যাখ্যা দেয়ার মধ্যেই আপনার স্বচ্ছতার পরিচিতি জ্বল জ্বল করে উঠতো। তখন প্রশ্নগুলোই ‘অবান্তর প্রশ্ন’ হিসেবে পাত্তাহীন হয়ে পড়তো। কিন্তু কার বা কাদের উদ্ভট পরামর্শে যৌক্তিক প্রশ্নের জবাব দানের পরিবর্তে মানববন্ধন আর বিক্ষোভ দেখালেন। মিছিল, বিক্ষোভ, মানববন্ধনের নানা ধকলে যৌক্তিক প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা যে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে- তা বোঝার মতো সচেতন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বিষয়টি দাঁড়ালো যে, অনেক লোকজন নিয়ে আপনাকে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে দেখে অপরিচিত মানুষ হিসেবে যদি সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করি-জনাব, আপনি কী এই এলাকার সম্মানীত সংসদ সদস্য ? তার জবাবে আপনি বুঝি আমার গালে চর থাপ্পর আর পাছায় লাথি মেরে দিবেন ? এটাই কী সঠিক জবাব ? একবার নিজের মেধা বুদ্ধি দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করলে ‘আমার দেয়া ভোটটির মর্যাদা পেলাম’ বলে গণ্য হবে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please