আজ [bangla_date], [english_date]

বন্দরে বিপুল পরিমাণ আদা, রসুন, পেঁয়াজ নিলামের উদ্যোগ

নিজেস্ব প্রতিনিধি : করোনা লকডাউনের মধ্যে রমজানে অস্বাভাবিকভাবে আদা. ওসুন ও পেঁযাজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই আমদানিকৃত এসব মসলা জাতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে রয়েছে। মৌখিক এবং লিখিতভাবে তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও আমদানিকৃত ওসব পণ্য বন্দর থেকে খালাস করতে ব্যবসায়িরা গড়িমসি করে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে ওসব পণ্যের মধ্যে যেগুলোর বন্দরে রাখার নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সেগুলো নিলামে তুলতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে আরএল (রিমুভ লেটার) পাঠানো শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে নিলামের জন্য ১২ কনটেইনার আদা, রসুন ও পেঁয়াজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের ২৫ থেকে ২৮ শতাংশই বাণিজ্যিক পণ্য (কমার্শিয়াল আইটেম)। তার মধ্যে আদা, পেঁয়াজ, রসুনের মতো ভোগ্যপণ্যের প্রায় পুরোটাই কনটেইনারে করে আসে। রোজার সময় যতো কনটেইনার আসে তার ১০ শতাংশই হলো আদা, পেঁয়াজ, রসুন, খেজুর ও চিনির মতো ভোগ্যপণ্য। ওসব কনটেইনারে গড়ে ২৫ টন পণ্য থাকে। আর এ ভোগ্যপণ্যের কনটেইনার দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে বাণিজ্যিক মূল্য হারায়। রমজান ঘিরে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের কনটেইনার দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে। বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা তা খালাসের উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরে আসা আদা, রসুন, পেঁয়াজ নির্ধারিত সময়ে খালাসের উদ্যোগ না নেয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে আরএল হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পণ্য খালাসে দেরি হওয়ার বিষয়ে আমদানিকারকরা বলছেন, কাস্টমস বাদে পণ্য খালাসের সঙ্গে যুক্ত অন্যসব সংস্থার কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে। ফলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন নিতে গিয়ে পণ্য খালাসে বেশি সময় লাগছে।  সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বন্দর প্রায় অকেজো হয়ে পড়ার অবস্থা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা খালি করে কনটেইনার জট নিরসন, সরকারি রাজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বাজারে পণ্য ঘাটতি নিরসনে প্রথম পর্যায়ে ১২ কনটেইনার আদা, রসুন, পেঁয়াজ দ্রুত নিলামের মাধ্যমে নিস্পত্তি করতে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে এক কনটেইনার আদা, দুই কনটেইনার রসুন ও ৯ কনটেইনার পেঁয়াজ। বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিত্য ভোগ্যপণ্যের কনটেইনার দ্রুত খালাস করা না হলে বাজারে এর সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যের বাজার স্থিতিশীল এবং চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে দ্রুত ওসব খাদ্য পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর থেকে খালাস করে নেয়া প্রয়োজন। সূত্র আরো জানায়, বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রোজার পণ্য খালাস করার জন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এর আগে আলাদাভাবে চিঠি দিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে আদা, রসুন, পেঁয়াজ মিলে মোট ১ হাজার ৮০০ টন থাকার তথ্য দিয়ে সেগুলো খালাস টওাক্রয়ায় সহযোগিতা করতে ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার এবং আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাছেও ওই চিঠি দেয়া হয়েছিল। এদিকে আদা, রসুন, পেঁয়াজের ১২টি কনটেইনার নিলামে তোলার জন্য বন্দরের পক্ষ থেকে পাঠানো আরএল পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস বিভাগ। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার (নিলাম) মো. ফরিদ আল মামুন জানান, কাস্টমস বিভাগ এখন ওসব পণ্যের ইনভেন্ট্রি সম্পন্ন করে দ্রুত নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। অন্যদিকে পণ্য নিলাম প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে বন্দরের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। একটা কনটেইনার হাতে পাওয়ার আগে বন্দর ও কাস্টমস ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। সেগুলোর কার্যক্রম পুরোদমে চালু করাটা জরুরি। তবে বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের কনটেইনার যেন কোনো অবস্থাতেই বন্দরে ফেলে রাখা না হয় সে ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য মো.জাফর আলম জানান, বাজারের ঘাটতি ও সরকারের রাজস্ব সুরক্ষায় আদা, রসুন, পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের কনটেইনার বারবার বলার পরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খালাসের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত নিলামের পদক্ষেপ নিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার সংরক্ষণের স্থান বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে। পণ্যভর্তি কনটেইনার দ্রুত ছাড় করা হলে যেমন নতুন পণ্য রাখার সুযোগ তৈরি হবে, আবার নিলামযোগ্য কনটেইনার নিয়ম অনুযায়ী নিলামে তুললে পরিচালন কার্যক্রমেও গতি আসবে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page