আজ [bangla_date], [english_date]

পাহাড়ে মিষ্টি পানের চাষ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: সবুজে মোড়ানো পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন অপার সম্ভাবনাময় একখণ্ড ভূ-স্বর্গ। সোনালি ধানে ভরে গেছে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। ধান, হলুদ, মারফা, মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা ও বরবটিসহ প্রায় ৪০ ধরনের সবজির চাষ হয় বিস্তীর্ণ পাহাড়ে।একসময় এসব পাহাড়ে কেবল জুম চাষ হলেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন পাহাড়ের চূড়া বা ঢালুতে পানের বরজ দৃশ্যমান। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপর পানের আবাদ শুরু করেন চাষিরা। প্রতি ২৫ শতক জমিতে পানের আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। পানের দাম ভালো পাওয়া গেলে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ হয়। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় পান চাষিরা।

জুমের সাথে এবার পাহাড়ে চূড়ায় পান চাষ করে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সীমানা পাড়া এলাকার অন্তত ৬০জন পানচাষি। বিস্ময়কর হলেও পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তারা। জুমচাষের চেয়ে পান চাষ লাভজনক। তাই অনেকেই পান চাষের দিকে ঝুকছেন। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পান চাষির সংখ্যা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পাহাড়ের চূড়ায় প্রথমবারের মতো ৬০ বরজে পানের আবাদ করেছে চাষিরা। দীঘিনালার সীমানা পাড়া এলাকায় পাহাড়ের ঢালুতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পান চাষ করেছেন নবীন ত্রিপুরা।  পানের যত্ন নিচ্ছেন এ প্রান্তিক কৃষক। এক স্বজনের মাধ্যমে পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষের কৌশল সর্ম্পকে ধারণা নেয়ার কথা জানিয়ে নবীন ত্রিপুরা বলেন, জুম চাষের পাশাপাশি ২০ শতক জমিতে পান চাষ শুরু করেছি। মে মাসে পানের বরজে চারা রোপণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ধীরে ধীরে পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে তোলা পুরো বরজ সবুজ পানে ভরে গেছে। প্রতি সপ্তাহে ১শ বিড়া পান বিক্রি করেন এ চাষি। বিশ শতক জমির পানের বরজ থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান নবীন ত্রিপুরা।

পান চাষের আয় থেকে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার চলে। পাহাড়ের চূড়ায় প্রথমবারে পান চাষ করেই সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান প্রান্তিক চাষি নবীন ত্রিপুরার স্ত্রী।একই এলাকার আরেক পানচাষি সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরা পান চাষে নানা সমস্যার কথা জানিয়ে বলেন, প্রথমবারের মতো পাহাড়ের ঢালুতে পানের বরজ গড়ে তুলেছি। কয়েকদিনের মধ্যে পান বিক্রি শুরু করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ পাহাড়ে চাষ হয় প্রথাগতভাবে। এসব জমির রেজিস্ট্রি না থাকায় চাষীরা কোন ধরনের সরকারি ঋণ সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা পায় না। কৃষি বিভাগ চাষীদের ঋণ সহায়তা দিলে পাহাড়ের কৃষকরা আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে।

চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ে পানির স্বল্পতা কারণে মে মাসে বৃষ্টির শুরুতে পানের চারা রোপণ করা হয়। পুরো বৃষ্টির মৌসুমে পানের বৃদ্ধি ঘটে। পাহাড়ের ঢালুতে পানি না জমায় পানের গাছ খুব বেশি নষ্ট হয় না। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে পাহাড়ে পান চাষ বন্ধ থাকে । পাহাড়ে ঝিরি- ঝরনায় বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট জলাশয় সৃষ্টি করতে পারলে সারা বছরই পাহাড়ের চূড়ায় পানের আবাদ করা সম্ভব । এবিষয়ে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছে পান চাষিরা।পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস। কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা প্রদানে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে ঋণ সহায়তার আওতায় আনতে পারলে সবুজ পাহাড়ে সোনা ফলবে। শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট থাকার পরও পাহাড়ে পান চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page