নিজস্ব প্রতিনিধি : সংগঠনটির ১১১ সাংগঠনিক ইউনিটের মাত্র ৩টিতে কমিটি রয়েছে। বাকি ১০৮টি ইউনিটের কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। গঠনতন্ত্রের চর্চা হয় না ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক এসব কমিটি আপদকাল শেষ করে এখন বিলুপ্ত বলেই গণ্য হওয়ার কথা। যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব কমিটি দিয়েই চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম । কোনো কোনো ইউনিটের কমিটি নেই ৮ থেকে ১০ বছর। তবুও সেসব শাখায় কমিটি দেয়ার ব্যাপারে তৎপরতা নেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। অবশ্য সংগঠনটির গঠনতন্ত্র মোতাবেক কেন্দ্রীয় কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। আপদকালীন তিনমাসও শেষ হয়েছে। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়মিত না হওয়ায় স্থবির হচ্ছে সংগঠনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে নেতৃত্ব তৈরির প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। কেউ কেউ নিজেদের জড়াচ্ছেন নানা অপকর্মে। গ্রুপ উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কোন্দলে জড়িয়েও খবরের শিরোনাম হচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সারা দেশে ১১১টি সাংগঠনিক ইউনিটের মাত্র তিনটি ইউনিটে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। এগুলো হলো- কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও নড়াইল জেলা শাখা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ (খ) ধারা অনুযায়ী জেলা ও মহানগর ইউনিটের মেয়াদ হবে ১ বছর। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটি চাইলে অনূর্ধ্ব ৯০দিন দায়িত্ব বাড়াতে পারেন। সে হিসাবে শুধু উল্লিখিত তিনটি ইউনিটের মেয়াদ রয়েছে বর্তমানে। সম্মেলনের ১ বছর পার হলেও কমিটি হয়নি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার। এছাড়াও কয়েকটি কলেজ শাখায়ও সম্মেলনের বছর পার হলেও কমিটি গঠন করা হয়নি। এর মধ্যে ইডেন মহিলা কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ অন্যতম। কমিটি নেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উঠে উর্বর ভূমি বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও। কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে নিয়মিত ছিলেন তারা এখন হতাশায় দিন পার করছেন। কেউ কেউ চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পড়ালেখা শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক পদপ্রত্যাশী যিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করে এখন হতাশায় দিন পার করতে হচ্ছে। কমিটি না হওয়ায় না পারছি পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে না পারছি আর রাজনীতি করতে। চার নেতা তাদের নিজেদের স্বার্থের দ্বন্দ্বে কমিটি দিচ্ছেন না।
এদিকে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির কারণে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব বসালেও গতি ফেরেনি ছাত্রলীগে- এমন অভিযোগ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরই বেশ কয়েকজন নেতার। তাদের দাবি- শোভন রাব্বানীকে সরিয়ে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা আগের ন্যায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এ দুই নেতার যৌথ ইচ্ছায় চলছে ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য নেতাদের কোনো পরামর্শ তারা নেন না। দায়িত্ব গ্রহণের ১ বছর শেষ হলেও এখনো কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা করতে পারেননি। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১৫ (ঙ) অনুযায়ী দুই মাস অন্তর একটি সাধারণ সভা হবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের। নেতাকর্মীদের অভিযোগ প্রেস রিলিজ নির্ভর সংগঠনে পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগ। মধুর ক্যান্টিনে সময় দেন না কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। নেতাকর্মীদের খোঁজতো দূরে থাক অভিযোগ রয়েছে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নেতাকর্মীদের ফোনই ধরেন না। তিনি বেশির ভাগ সময়ই বাসায় ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর কমিটি গঠন ও সংগঠনকে গতিশীল করার প্রক্রিয়াগুলো শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনায় সে প্রক্রিয়া থেমে যায়। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক আমাদের মূল কাজ। কিন্তু সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় আমরা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারিনি। জয় বলেন, করোনাকালে ছাত্রলীগ সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে মানবিক কার্যক্রমকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা করোনার শুরু থেকে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা শহর থেকে গ্রাম- সব জায়গায় ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে। আমরা করোনাকালে মানুষকে সচেতন করার জন্য অনেকগুলো ক্যাম্পেইনও চালিয়েছি। তিনি বলেন, এখন আমরা কমিটিগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমরা কমিটিগুলো করে ফেলবো।
বিতর্কিতদের অব্যাহতি দেয়া হলেও পদায়ন হয়নি ত্যাগীদের
এদিকে পদ হারানো শোভন-রাব্বানীর স্বাক্ষর করা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরই রক্তক্ষয়ের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অভিযোগ ছিল শোভন রাব্বানী বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। বাদ দিয়েছেন ত্যাগীদের। এরপর লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন পদবঞ্চিতরা। যারা আগের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে আন্দোলন বন্ধ করা হলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিতর্কিতদের সরিয়ে ত্যাগীদের সেসব পদে মূল্যায়ন করা হয়নি। জয়- লেখক দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ১৭ই ডিসেম্বর বিতর্কিত ২১ জনসহ ৩২ জনকে অব্যাহতি দিলেও তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শূন্য হওয়া পদে ত্যাগীদের এখনো মূল্যায়ন করেননি। যার দরুন ক্ষোভ বাড়ছে ত্যাগী ও পদবঞ্চিতদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদবঞ্চিত নেতা বলেন, ছাত্রলীগ এখন দুই নেতার সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো সংগঠন পরিচালনা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে সংগঠন ধ্বংস হয়ে যাবে। শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে তাদের দায়িত্ব দেয়ার পর তারা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য হওয়া পদগুলো ত্যাগীদের দিয়ে পূরণ করা হবে। কিন্তু এক বছর হয়ে গেলেও তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি।