আজ [bangla_date], [english_date]

ছাড় দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

নিজস্ব প্রতিনিধি : দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের বড় অংশই মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। কিন্তু বিদ্যমান করোনা মহামারীর কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাছাড়া খ-কালীন চাকরি করে পড়ার খরচ মেটায় এমন অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আয়ের উৎসও বন্ধ। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই ফি দিতে না পেরে সেমিস্টার চালিয়ে না নেয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে টিউশন ফির ওপর বিভিন্ন হারে ছাড় দিচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কিস্তিতে অল্প অল্প করে ফি পরিশোধের সুযোগও দেয়া হচ্ছে। এমনকি রিটেক, ইমপ্রুভমেন্ট ও বিলম্ব ফির মতো জরিমানার খাতগুলোও মওকুফ করে দিয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে দেশে ১০৭টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৬০ জন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধায় আয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি। কিন্তু করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর পরই পারিবারিক আর্থিক সংকটে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীর টিউশন ফি বকেয়া হয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী ফি দিতে না পেরে সেমিস্টার চালিয়ে না নেয়ার সিদ্ধান্তও কর্তৃপক্ষকে জানায়। তবে সংকটের মধ্যে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। টিউশন ফিতে বড় ছাড় দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

সূত্র জানায়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক থেকে একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়টি করোনা সংকটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে টিউশন ফির ওপর সেমিস্টারপ্রতি টাকা ছাড় দিচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীর পড়ার খরচ চালিয়ে নেয়ার আর্থিক নিশ্চয়তার জন্য অভিভাবকদের বীমার আওতায় এনেছে। আর সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে টিউশন ফির ওপর সবচেয়ে বেশি ছাড় দেয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর।

প্রতিষ্ঠানটি নতুন-পুরনো সব শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। তাছাড়া নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর একটি সেমিস্টারে ১২ শতাংশ ও আরেকটি সেমিস্টারে ১৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছিল। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি টিউশন ফির ওপর কোনো ছাড় ঘোষণা করেনি। তবে একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা করছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর বিভিন্ন হারে ছাড় দিচ্ছে।

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিতে ছাড় দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জরিমানা মওফুক করেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফি ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আগে টিউশন ফি জমা দিতে দেরি হলে কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে জরিমানা নেয়া হতো, এখন তা নেয়া হচ্ছে না। তবে যেহেতু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র আয়ের উৎস। আর আয় কমে যাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন কাটতে হচ্ছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের স্বস্তিতে ও চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করছে। যেসব শিক্ষার্থী আগে থেকে কোনো ছাড় পাচ্ছে না, তাদের টিউশন ফির ওপর ১৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। আর যারা আগে থেকে ছাড় পাচ্ছে তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ ছাড় যোগ করা হয়েছে। সবার জন্য দেয়া সাধারণ এ ছাড়ের বাইরেও বিভিন্ন হারে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েভার দেয়া হচ্ছে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ টিউশন ফি মওফুক করে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচের নিশ্চয়তায় প্রতিষ্ঠানটি আরো একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বীমার আওতায় আনা হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষার্থীর অভিভাবক নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণে কিংবা অন্য যে কোনো কারণে মারা যায়, তাহলে ওই বীমার আওতায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর পড়ার খরচ চালিয়ে নেয়া হবে। অনেক শিক্ষার্থী এ সুবিধা পাচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও চাইলে এটা অনুসরণ করতে পারে।

এদিকে করোনা ভাইরাসজনিত সংকটের মধ্যে পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বিনা সুদের শিক্ষাঋণ সেবা দিচ্ছে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় আরেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টি সেমিস্টারপ্রতি ৫০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করছে। ইউআইইউ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স সূত্র মতে, ইউআইইউ বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচ চালিয়ে নিতে সুদবিহীন শিক্ষাঋণ দিয়ে আসছে। তবে কভিড-১৯ অতিমারীর কারণে শিক্ষাঋণের পরিধি বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি সেমিস্টারের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বিনা সুদের এ ঋণের আবেদন করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে আবেদন অনুমোদন করে ও ঋণ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সেমিস্টারে ঋণ পরিশাধ করে অথবা পরিশোধ করতে না পারলে আবেদনের মাধ্যমে সময়সীমা বাড়িয়ে নিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান জানান, অনেক শিক্ষার্থীই তাদের সংকটের কথা জানাচ্ছে। নিজেরা সংকটে থাকলেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতি সেমিস্টারে ৫০ লাখ টাকার বিনা সুদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিতে বড় ছাড় দেয়া হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এভাবে বেশিদিন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন জানান, প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই বিভিন্ন হারে টিউশন ফির ওপর ছাড় দিচ্ছে। এ ছাড়ের বাইরেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। যেমন আগে টিউশন ফি বকেয়া থাকলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতো না। ওসব ক্ষেত্রে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক নমনীয়। আসলে একদিকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি একদম নেই বললেই চলে। এর সঙ্গে পুরনোরাও যদি সেমিস্টার বিরতি নেয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাই কঠিন হয়ে পড়বে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page