আজ [bangla_date], [english_date]

চোরাইপথের কারণে পশুর দাম নিয়ে শঙ্কিত খামারীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি : ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরুর কারণে এবারের কোরবানীর পশুর দাম নিয়ে দেশীয় খামারীরা শঙ্কিত। কোরবানী ঘিরে ইতিমধ্যে খামারি ও বেপারিরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এবার কোরবানি পশুর জোগান বেশি থাকায় উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়ে খামারিরা শঙ্কায় রয়েছে। আর প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাইপথে গরু আসা শুরু করায় তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং পশু খামার সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।  এবার দেশে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। কারণ কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশীয় গরু-ছাগল উৎপাদনে ছোট-বড় প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক খামারি কাজ করছে। তাছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে আরো অনেক ছোট-বড় খামার গড়ে উঠেছে। সেগুলো থেকে কোরবানির পশুর জোগান আসবে। বিশেষ করে চর ও উপকূলীয় এলাকায় গরু, ছাগল ও মহিষ পালনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাছাড়া অনেকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গবাদিপশু লালনপালন করে থাকে। ফলে এবার কোরবানি পশুর সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই। বরং চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত ২০১৮ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫ লাখ। আর গত বছর চাহিদা ছিল ১ কোটি ১১ লাখ। এবার কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর জোগান দেয়া যাবে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি রয়েছে। তবে করোনার কারণে এ বছর পশুর চাহিদা বাড়বে না বলে মনে করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিএসএফের গুলির মুখেও দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসা শুরু হয়েছে। ভারত সরকার কর্তৃক বাংলদেশে গরু রপ্তানি নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধ হয়নি। বরং ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু কেনাবেচা শুরু করেছে দুই পাড়ের গরু ব্যবসায়ীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতীয় গরু আনতে গিয়ে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। তার পরেও নগদ লাভের আশায় ভারত থেকে গরু আনা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফের গুলি উপেক্ষা করে ভারত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমিত আকারে হলেও গরু আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঈদের আগে প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় গরুর আমদানি হবে, সেই সঙ্গে হতাহতের ঘটনাও বাড়বে। দেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী, আউলিয়ার হাট, বাউরা, রসুলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার গোরক মন্ডপ, ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, নীলফামারীর চিলাহাটি, দিনাজপুরের হিলি, জয়পুরহাটের টেপরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কোরবানি উপলক্ষে গরু এনে জড়ো করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে ২০০ গরু আমদানি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা কয়েকদিনের মধ্যে আমদানির সংখ্যা ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়বে। করোনা পরিস্থিতিতে এবার মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ফলে কোরবানি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দামও অনেক কম হতে পারে। পাশাপাশি দেশে কোরবানি পশুর জোগান অনেক। ফলে উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়ে খামারীরা শঙ্কিত। কোরবানী ঘিরে খামারীরা পশুর নিয়ে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে থাকে। তাদের সবচেয়ে ভয় হচ্ছে- পশু বিক্রি না করতে পারলে বছরজুড়ে খাটানো টাকার পুরোটাই লোকসান হয়ে যাবে। একটি গরুর জন্য দিনে ন্যূনতম ১৫০-১৭৫ টাকা খরচ হয়। গরুকে প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি, কুড়ো, ফিড ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। এমন অবস্থায় পাশের দেশ থেকে বেশি মাত্রায় গরু এলে দেশি গরুর দাম পড়ে যাবে। তখন খামারীদের লোকসান গুনতে হবে। বর্তমানে দেশের খামারগুলোয় পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও মহিষ রয়েছে। এদিকে কোরবানী ঘিরে ভারতীয় গরু আসা রোধ প্রসঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি কুড়িগ্রামের পরিচালক লে. কর্নেল মো. জামাল হেসেন জানান, ঈদ সামনে রেখে গরু চোরাচালান যাতে না বাড়ে সেজন্য সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করেছে। পাচার রোধে সিজারলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে। সে অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সীমান্তে গরু পাচার রোধে বিজিবি সতর্ক রয়েছে। অন্যদিকে কোরবানীর পশুর জোগান প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার জানান, কয়েক বছর ধরে দেশীয় উৎস থেকে কোরবানি পশুর চাহিদা পূরণ হচ্ছে। গত বছর ১ কোটি ১১ লাখ পশুর চাহিদার বিপরীতে ১ কোটি ১৮ লাখ পশুর জোগান ছিল।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page