আজ [bangla_date], [english_date]

চরম সংকটে পত্নীতলায় কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকরা

নওগাঁ প্রতিনিধি : স্থানীয় পর্যায়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার গুনগতমান উন্নয়ন ও বেকারত্ব হ্রাসে কিন্ডার গার্টেন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। ক্লাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, অভিভাবকদের সাথে সমন্বয় ও যোগাযোগ ইত্যাদি কারণে কিন্ডার গার্টেনের উপর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভরসা ও আস্থা বেড়ে গেছে। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির করাল থাবার শিকার হয়ে সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে বন্ধ রয়েছে পত্নীতলার ৬৮টি কিন্ডার গার্টেন।

দীর্ঘ ১৩ মাস প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেতন ভাতা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবণ যাপন করছে এ সকল কিন্ডার গার্টেনের সাথে জড়িত প্রায় এগারশত শিক্ষক ও কর্মচারী। পেটের তাড়নায় অনেকেই সম্মানজনক এই পেশা পরিবর্তন করে নিম্ন আয়ের পেশা গ্রহণে বাধ্য হচ্ছে। জানা গেছে, কিন্ডার গার্টেনগুলো চলে মুলত শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন, সেসন ফি, পরীক্ষা ফি, কোচিং ফি ইত্যাদি দিয়ে। কিন্ডার গার্টেনগুলো সরকারি কোন প্রকার অনুদান পায়না। প্রাণঘাতী করোনার থাবায় দীর্ঘ ১৩ মাস ধরে তালাবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩হাজার থেকে সব্বোর্চ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকে।

বর্তমান দ্রব্যমুল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে এই বেতন কিছুই না। প্রাইভেট আর কোচিং এর উপর ভর করে কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকলে প্রাইভেট পাওয়া সুবিধা হওয়ায় বেতনের তোয়াক্কা না করে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা এ সকল কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতার পেশা বেছে নেয়। এই চাকুরী গ্রহণের জন্য অনেককেই প্রতিষ্ঠানে দিতে হয়েছে অনুদান। করোনা ভাইরাসের কারণে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে প্রাইভেট ও কোচিং। বেতন-ভাতা না পাওয়া ও প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ থাকার কারণে কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত শিক্ষকরা চরম আর্থিক সংকটে দিনাতিপাত করছে।

পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে, আত্বীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে, দোকানে বাঁকী খেয়ে তাঁরা কোন রকমে জীবণ ধারণ করছে। কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকরা পেশাগত কারণে না পারছে কাহারো নিকট হাত পাততে আবার না পারছে সুন্দরভাবে জীবণ চালাতে। অন্যদিকে সরকারি ভাবে সাহায্য সহযোগিতা ও প্রণোদনার ক্ষেত্রে কিন্ডার গার্টেন শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই জীবণ আর জীবিকার তাগিদে কিন্ডার গার্ডেন শিক্ষকরা তাদের সম্মানিত পেশা পরিবর্তন করে অপেক্ষাকৃত কম সম্মানের পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন পত্নীতলা উপজেলা শাখার সভাপতি ও নজিপুর মালঞ্চ কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, পেটের দায়ে ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের কেউ দারোয়ানের চাকুরী, কেউ দোকানের কর্মচারী আবার কেউ দিন মজুরীর পেশা বেছে নিয়েছেন।

অনেক শিক্ষক একটি কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষকে সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলেও কিন্ডার গার্ডেন শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবী আমলে নেওয়া হয়নি। দীর্ঘ সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ড্রপ আউট হওয়া শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে এনে কিন্ডার গার্টেনগুলো আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নিয়ে চরম সংশয় প্রকাশ করেন এই শিক্ষক নেত। কিন্ডার গার্টেনের সমস্যা পীড়িত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জীবণযাপনে সহায়তার জন্য তাদের প্রণোদনা দেওয়ারও জোর দাবী জানান তিনি।

এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিটন সরকারের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিন্ডার গার্টেন শিক্ষক ও কর্মচারীদের আর্থিক সংকটের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোন সহায়তা না পাওয়ায় তাদের বিষয়ে কিছু করা সম্ভব হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে স্থানীয় ভাবে তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page