নিজেস্ব প্রতিনিধি : কালো বাজারে চলে যাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্য মূল্যের পণ্য। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো তদারকি নেই। তবে অন্য কোনো সরকারি সংস্থার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলেই কেবল ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফলে টিসিবি ডিলারদের কেউ কেউ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করার জন্য পণ্য উত্তোলন করেই তা সরাসরি কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০টির অধিক এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। অনেক ডিলার টিসিবি থেকে পণ্য উত্তোলন করে ট্রাকে করে বিক্রি করার আগেই অর্ধেক পণ্য সরিয়ে ফেলছে। ডিলাররা যখন পণ্য নিয়ে ট্রাকে করে বিক্রি করতে আসে তখন বরাদ্দ করা পুরো পণ্য আনা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে না। এসব অপকর্মের সঙ্গে টিসিবির কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রাহক এবং টিসিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশ যখন সঙ্কটকাল পার করছে তখন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী, ডিলার ও টিসিবির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে বিক্রি করতে বরাদ্দ পণ্য কালোবাজার চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে টিসিবির পণ্য কালোবাজারে পাচারের ২০টিরও অধিক ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে টিসিবি। পণ্য তদারকির ক্ষেত্রে টিসিবির জনবলের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। জেলা পর্যায়ে কাজ করে সংস্থাটির মাত্র ৩ জন কর্মকর্তা। এই জনবল দিয়ে টিসিবি কিভাবে তদারকি কার্যক্রম চালাবে তা বলাইবাহুল্য। সূত্র জানায়, সম্প্রতি রংপুর শহরের মধ্যপার্বতীপুর এলাকার হানিফ মিয়ার বাড়ির খাটের নিচ থেকে টিসিবির এক হাজার ২৩৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ওই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তার আগে ১ এপ্রিল ঝালকাঠিতে টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে মজুদ করায় ৩ ডিলারকে ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ৬ এপ্রিল রাতে রংপুর নগরীর বাবুপাড়া এলাকায় খালেক মিয়ার গুদাম থেকে টিসিবির ৩৬৪ লিটার সয়াবিন তেল, ২ হাজার ৩৫০ কেজি চিনি, ১০ বস্তা মসুর ডাল এবং ২৫০ কেজি পেঁয়াজ আটক করা হয়। অথচ খালেক মিয়া নামে টিসিবির কোনো ডিলার নেই। তাছাড়া গত ১১ এপ্রিল টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রির দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রামপুর বাজারের ডিলার মুজাহিদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং তার গুদাম সিলগালা করে দেয়। ৯ এপ্রিল নেত্রকোনা উপজেলার কৃষ্ণরামপুর বাজারে টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রির সময় স্থানীয় লোকজন ৪৬ লিটার সয়াবিন তেলসহ ২ জনকে আটক করে। ১৩ এপ্রিল একই অভিযোগে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলিতে ডিলারসহ ২ জনকে আটক করে পুলিশ। তারা টিসিবির ৫ বস্তা চিনি, ২ বস্তা মসুর ডাল ও ৪ বস্তা ছোলা বিক্রির জন্য মজুদ করে ছিল। গত ১৪ এপ্রিল নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ বাজারের টিসিবির ডিলার পরিতোষ কু-ু ও সদর উপজেলার নাকশী বাজারের ব্যবসায়ী লিটন শিকদারকে আটক করা হয়। তখন জব্দ করা হয় টিসিবির ১৮ বস্তা চিনি এবং ২৪ বস্তা ছোলা (প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি)। এদিকে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রিকালে শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি মানা হচ্ছে না। যদিও এ বিষয়ে ডিলারদের নির্দেশনা দেয়া আছে। কোথাও কোথাও ব্যানারে লেখা থাকে, বৃত্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও ক্রেতাদের তা মানানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ঢাকার বাইরের চেয়ে ঢাকায়ই নির্দেশনা উপেক্ষা বেশি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, টিসিবির নিজেদের কোনো তদারকি বা তদন্ত টিম নেই। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যদি কোনো লিখিত অভিযোগ বা সুপারিশ আসে তবে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়। সাধারণত ডিলারদের বিষয়ে অভিযোগ এলে টিসিবির পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়। প্রয়োজন মনে করলে জামানতও (১৫ হাজার টাকা) বাতিল করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ডিলারশিপও বাতিলও হয়। বিগত ১৫ থেকে ১৭ দিনে এমন ২০টির মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।