বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনযাত্রা। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ঘুনে ধরা এই সমাজের আসল চেহারা। কতটা অসহায় আর ভঙ্গুর আমাদের দাম্ভিকতা। দেখিয়েছে স্বাস্থ্য ও মানবিক সেবা কতটা বেহাল। করোনায় আমরা অনেককে হারিয়েছি, অনেককিছু হারিয়েছি কিন্তু প্রাপ্তিও কম নয়। দেখেছি হিন্দু লাশের সৎকারে মুখাগ্নি করাচ্ছে মুসলমান। সন্তান বাবা-মাকে, বাবা মা সন্তানকে, কিম্বা স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে ফেলে গেলেও এগিয়ে এসেছে মানবিকতা। স্বজন ছাড়াই লাশ দাফন করছেন অন্যরা। বিদেশি বা নামী-দামী হাসপাতাল ছাড়া যাদের চিকিৎসা হতো না তারাও এখন বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে এমনকি জেলা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও। এ যেন নিয়তির এক বড়ই বিচিত্র লীলা। এছাড়া মহামারীর এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষের পাশে যেসব শিল্পপতি বা বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার ছিল তাদের অনেকেই আসেননি বরং একাজে ভিক্ষুক তার সারা জীবনের সঞ্চয় তুলে দিয়ে ত্যাগের মহান নজির স্থাপন করেছেন। উপরন্ত যে শ্রমিকের শ্রম ঘামে গড়ে উঠেছে ধনীর বিলাস, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প কল-কারখানা এই দুঃসময়ে তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করে, বেতন ভাতা না দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলা হয়েছে। ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধ এখানে ভূলুন্ঠিত হয়েছে। সম্মুখসারির লড়াইয়ে রয়েছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, প্রশাসন, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার লোকজন। জীবন দিয়ে কিম্বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মহান এ দায়িত্ব পালন করায় জেগে রয়েছে মানবিকতার বাতিঘর। পক্ষান্তরে কিছু কিছু হাসপাতাল, চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনা ও অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় রোগি মৃত্যুর ঘটনা আমাদের মানবিকতাকে প্রশ্নের মু্খে ফেলে দিয়েছে। তারপরও মনে করি এসবের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবে মানবিকতা, জয় হবে মানবতার। প্রকৃতির প্রতিশোধের কথা বলা হলেও শোধরাতে হবে আমাদেরই। করোনা হয়ত একদিন চলে যাবে, তবে এর ক্ষতচিহ্ন ঠিকই রয়ে যাবে। আর এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণ জরুরি।
আশরাফুল ইসলাম