আজ [bangla_date], [english_date]

এবার জামাল মোস্তফার বিরুদ্ধে দুদুকে অভিযোগ

মীর আলাউদ্দিন : ড্রাইভার থেকে কোটিপতি হওয়া, জামাতের সাথে আতাতের অভিযোগ রয়েছে, নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়াসহ স্বপরিবারে নানা অপরাধে যুক্ত হবার কারণে বির্তকিত রাজধানী উত্তর সিটির ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ন্তহীন অভিযোগ। বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার বির্তকিত হয়েছেন। কখনো ছেলের ইয়াবা ব্যবসা বা কখনো নিজের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া নিয়ে কিংবা শ্যালক ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ইস্যুতে। এবার সেই বির্তকিত জামাল মোস্তফার বিরুদ্ধে গত ১৭/০৮/২১ তারিখে দুদুকে অভিযোগ জমা হয়েছে।

জানা যায় নব্বই এর আগের দিকে জাতীয় পার্টির মনোনীত কমিশনার মোছাদ্দেক হোসেন মুরাদের ড্রাইভার হিসেবে সামান্য বেতনে চাকুরী করা মোস্তাফাই বর্তমানের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা। এক সময় সেই কমিশনার মুরাদের নির্দেশেই ৪ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করা ক্যাডার কাম ড্রাইভার এখন আওয়ামীলীগের কান্ডারী যার ফল স্বরুপ তিনি ৪ নংওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি পদটিও পেয়েছেন। সুত্র জানায় বর্তমান কেন্দ্রীয় মসজিদের বিপরীত পাশে আওয়ামীলীগের ব্যানরে আগুনে লাগিয়ে পুড়িয়ে দেবার জন্য সেই সময় ড্রাইভার মোস্তফা ব্যপক পরিচিত লাভ করেন। জানা যায় ১৯৯৩ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে ওই ওয়ার্ডের সভাপতি আমির হোসেন মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচন না করায় জামাল মোস্তফা কামাল মুজুমদারের কাছে সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং আওয়ামী মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন। জামাল মোস্তফা প্রথমবার নির্বাচনে পাশ করার পর তার সম্বল বলতে ছিল শুধু একখানা ভগ্ন প্রায় ৫০ সিসির একটি মোটর বাইক।

জোট সরকারর সময় নিজেকে আওয়ামী বিরোধী কর্মকান্ডে পরোক্ষ অংশ গ্রহন করবেন মর্মে জামাতের মন্ত্রী মুজাহিদের সুপারিশে বেশ খানেকটা সরকারি জায়গাও বরাদ্দ পান তিনি। জামাত শিবির এবং বিএনপির সাথে আতাত করেই বদলে যায় ড্রাইভার মোস্তফার জীবন। মাত্র কয়েক বছরেই তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন একজন ব্যবসায়ী হিসেবে। সুত্রে জানা যায় জামাত বিএনপির সাথে সখ্যতা করে শিল্পপতি বনে যাওয়া জামাল মোস্তফা যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও কামাল উদ্দিন জাফরীর শ্যালক বিএনপি ওয়ার্ড কমিশনার হাজ্বী রফিকুল এর সঙ্গে একই বাসায় ভাড়া থাকতেন। ৫ ই জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি ও তার স্ত্রী রোকেয়া ামাল আওয়ামীলীগের আতঙ্ক ১৬ আসনে বিএনপির ঘাটি মোল্লা পরিবারের একলাছ উদ্দিন মোল্লাকে সমর্থন দেন আওয়ামীলীগের এমপি কামাল আহম্মেদ মুজুমদারের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে ভাসানটেকে জাসদ নেতা জামাল খুন হবার পরে তার স্ত্রী কাউন্সিলর জামাল মোস্তফাসহ অনেকের বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন। একাধিক সুত্রে জানা যায় জামাল মোস্তফার ব্যবসায়িক ভাবে যারা তাদের বেশির ভাগই রয়েছেবিএনপি জামাতের সদস্য তাদের মধ্যে হাজ্বী রফিকুল ইসলাম বিএনপি কমিশনার, যুবদল নেতা মিকা, বেলায়েত, ওই ওয়ার্ডের বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জনি দেওয়ান, আবু সাইদ ও কালা আমান।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় ভাঙ্গারী হোন্ডার মালিক সেই ড্রাইভর জামালের এখন শত শত কোটি টাকার সম্পদ হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ১/১৪, পূর্ব বাইশটিকিতে আড়াই কাঠা, টাওয়ার- স্বণালী গার্ডেন, পশ্চিম বাইশটিকিতে বারো কাঠা, ৫৫/১, এভিনিউ-১ ব্লক- বি, দিগন্ত সমিতিতে সাড়ে তিন কাঠা, ইমাননগর হাজী রোডে পনের কাঠা, ইমাননগর সেকশন-১৩ তে ৫৫/৪ এ পাঁচ কাঠার প্লট, ভাগনের বাড়ির পাশে পাঁচ কাঠার প্লট, সেলটেক র‌্যাকেন সিটিতে ১৫০০ বর্গফুটের তিনটি ফ্ল্যাট, ৬৪৫-ঘ, পশ্চিম কাজী পাড়ায় পাঁচতলা ভবন, ৬৪৮/৩ পশ্চিম কাজী পাড়ায় দুইতলা ভবন, রুপনগর এলাকার শিয়ালবাড়িতে ১ নং রোডে পাঁচ কাঠার প্লট, ১২ নং রোডে একটি বাড়ি, সেকশন সাতে পাঁচ কাঠার প্লট, জনতা হাউজিংএলকিায় পাঁচ কাঠার প্লট, ১০ নং কমিউনিটি সেন্টারের পিছনে পাঁচ কাঠার প্লট, ১৩/সি এক নং রোডে পাঁচ কাঠার প্লট, মিরপুর প্যাকেজিংটি চল্লিশ কাঠা, ১৩/সি ৪/৪০ এ পাঁচ কাঠার প্লট, পশ্চিম ভাষানটেকে বিভিন্ন দাগে ষাট কাঠা, সাভারের বিরুলিয়ায় পাঁচ বিঘা, গাজীপুর গাছায় বাংলো বাড়িসহ দুই বিঘা, সাভরে মেইন রোডের সাথে একটি ফিলিং স্টেশন, কাঁচপুরে কার্টুন ফ্যাক্টরি, পদ্মা পাড়ের আশে পাশে পাঁচ একর জায়গা, ১৩/বি, লাইন ৭ এ দুইটা প্লট মোট পাঁচ কাঠা, ১৩/সি ১/৪৬ এ ৩ কাঠাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক সম্পদ। অভিযোগ রয়েছে জমি দখল, অন্যের জমি নিজের বলে বিক্রি করা, সমিতির নামে লাখ লাখ টাকা আত্মাসাত করা। চাঁদাবাজি, মাদক বানিজ্যসহ অপরাধের শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে জামাল মোস্তফা পরিবার।

৯০ এর পর থেকে ধীরে ধীরে অবৈধ সম্রাজ্য গড়ে তুলে হয়েছেন শিল্পপতি। জামাল মোস্তফার ভায়রাভাই কাম (পিএএস) ওমর ফারুক তিনি কাউন্সিলরের যোগসাজশে ৪নং ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টারের উপরে ফ্ল্যাট করে দিবেন এবং মিরপুর-১৩ টিনসেড কলোনিতে প্লট ও রাকিন সিটির পিছনে প্লট দেওয়া কথা বলে বিভিন্ন ভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জামাল মোস্তফার আরেক ভায়রাভাই ওবায়দুল হক বৈশাখ বহুমুখী সমবায় সমিতির লিঃ খুলে বসে সেখানে এককালীন লাখ টাকা রাখলে মাসে দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়া হবে। কেউ যদি মাসে টাকা না নেয় যত পরিমান টাকা রাখা হবে তিন বছর পর তার ডাবল টাকা দেওয়া হবে। এমন অফার পেয়ে শতশত মানুষ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ১০ লাখ, ২০ লাখ করে রাখা শুরু করে। মেয়াদ পূর্তি হলেও টাকার দেওয়ার নামে নানা তালবাহানা শুরু করে। পরে কাউন্সিলর জামাল মোস্তফাকে জানানো হলে ভুক্তভোগীদের আশ্বাস না দিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবাররা টাকা না পেয়ে নিঃস্ব অনেকেই।

অন্যদিকে জামাল মোস্তফার মাদক পুত্র রফিকুল ইসলাম রুবেল এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীএবং একাধিকবার প্রশাসনের কাছে ধরাশায়ীওহয়েছেন। ১১৫ পিস ইয়াবাসহ রুবেল ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জামিনে এসে তার মাদক বানিজ্য আরো বৃদ্ধি করে তুলে। এলাকার ফুটপাত দখল বানিজ্য, মারামারি কাটাকাটি সব নিয়ন্ত্রণও রুবেলের হাতে। এলাকার প্রায় সকল ফুটপাথ দোকান থেকে তার নামে প্রতিদিন চাঁদা উঠে। জামাল মোস্তফা পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়লেও সে তার দখল বাজি চাঁদাবাজি, বিচার শালিসের নামে অনৈতিক অর্থদাবী সহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে। জামাল মোস্তফা পরিবারের কথাই মিরপুর-১৩, কাফরুল থানা এলাকায় আইন চলে বলেও এলাকাবাসী এ প্রতিবেদককে জানান। সেখানে বৈধ-অবৈধ সব কিছু হয়ে তার ইশারায়। ভুক্তভোগী নুর জাহান নামের একজনের কাছ থেকে জানা যায় আমাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে, এখন ফ্ল্যাট দিচ্ছেনা।

কাউন্সিলর জামাল মোস্তফার কাছেও গেছি বলেছি আপনার ভায়রাভাই আপনার কথা বলে টাকা নিয়েছে। এখন টাকাও দেয়না ফ্ল্যাট ও দেয়না একথা শুনার সাথে সাথে বলে সব মিথ্যা কথা বলছো তোমরা যাও বের হও আমার অফিস থেকে। কাউন্সিলরের ভায়রাভাই ওমর ফারুক টাকা নেওয়ার বিষয়ে স্বীকার করে বলেন টাকার বিষয়ে আমি জানি তবে নাসির নামে আরেক লোক ছিলো তাকে খুজে পেলেই সব সমাধান করা যাবে। সমিতির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলরের আরেক ভায়রা ভাই বৈশাখ সমিতির সভাপতি ওবায়দুর হক জসিমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়। কাউন্সিলর জামাল মোস্তফার শ্যালক সৈয়দ মোল্লা জামাতের সাথে যুক্ত এবং বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ান বলেও এলাকাবাসী জানান। এসকল বিষয়ে কাউন্সিলর জামাল মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page