8th, December, 2023, 11:47 am

২ কোটি টাকা সুদ নিয়েও বাড়ি দখলের পায়তারা

নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজধানী পল্লবীতে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে ঢাকা ১৬ আসনের সুদের ব্যবসায়ীরা। ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা সুদ নেবার পরেও এবার তারা ভুক্তভোগীর বাড়ি দখলের পায়তার করছে। এর আগে সুদের টাকা দিতে দেরি হবার কারণে প্রথমে ভুক্তভোগীকে মারধর বাড়ী ভাংচুর করে পরে পা ভেঙ্গে দেয় সুদের ব্যবসায়ীরা। এমনই ঘটনা ঘটেছে পল্লবী থানধীন এলাকায়, ভুক্তভোগীর নাম সালমা। সুদের টাকা আদায় করে দেবার লক্ষ্যে আদায়কারীদের সাথে ভুক্তভোগীদের ফ্ল্যাট বাসায় যান পল্লবী থানার এসআই জিল্লুর রহমান। পরে পুলিশ সামনেই সুদের ব্যবসায়ীরা মারধর করেন সালমা আক্তার তার অসুস্থ স্বামী বাবুল ও তার মেয়েকে। রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে বসবাসরত সাড়ে ছয়তলার বাড়ীটিই সুদের ব্যবসায়ীরা এখন দখল নিতে মরিয়া বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, মিরপুর ১১, সি ব্লকের বাসিন্দা সালমা আক্তার ও তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন বাবুলের  টাকা জরুরী প্রয়োজন হওয়ায় এলাকার কিছু সুদের ব্যবসায়ীর নিকট থেকে টাকা সুদে নেন ষ্ট্যাম্প করে। তবে সুদের টাকা সবাই কমবেশি নিয়েছে সুদের ব্যবসায়ীরা অনকেই আসলের চেয়ে সুদ নিয়েছে বেশি তাতেও সমস্যা ছিলোনা। কিন্তু কিছু দিন আগে ভুক্তভোগীর স্বামী বাবুল অসুস্থ (ওপেন হার্ট সার্জারী) হওয়ায় সুদের টাকা দিতে পারছিলেন না। আর এতেই বাধে বিপত্তি সুদের ব্যবসায়ীরা হঠাৎ চাপ প্রয়োগ করছে আসলসহ সুদ দাও না হলে বাড়ী বিক্রি করে টাকা দাও বলে চিল্লাফাল্লা করছে। সুদের টাকা আদায়ে সুদের ব্যবসায়ী ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ওই বাড়ীতে গিয়ে হুমকি ধামকিসহ মারধর করে আসছেন ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারের সদস্যদের।  সুদের ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয় স্বজন হওয়ায় পল্লবী থানার প্রশাসন চুপ রয়েছে। চলতি মাসের ১৪ তারিখে পল্লবী থানার এসআই জিল্লুর রহমানের সামনেও তাদের মারধর করে স্থানীয় যারাই ভুক্তভোগীর পাশে দাড়াতে চায় তাদেরও হুমকি দেয় সুদের ব্যবসায়ীদের পালিত সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, আমরা যাদের থেকে টাকা নিয়েছি তার চেয়ে সুদ দিয়েছি বেশি, কিছু দিন ধরে আমার স্বামী অসুস্থ থাকায় বেশ ক’মাস সুদ দিতে পারিনি বিধায় তারা এখন আমার বাড়ী দখলের চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, আমাকে মেরে পা ভেঙ্গে দিয়েছে, আমার মেয়ের চুল ধরে ছয়তলা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে মারধর করেছে। আমি তাদের হাতে পায়ে ধরে বলেছি কটা মাস সময় দিন সুদ সহ আসল টাকা দিয়ে দিবো। কিন্ত আমার কথা তারা না শুনে বাড়ী ভাংচুর সহ প্রায়ই দিন হুমকি ধামকি মারধর করে পুলিশের সামনেও আমাকে মারধর করে। ওরা একদল ছেলেপেলে এসে বাসার নিচে  মাদক সেবন করে আজেবাজে কথা বলে, আমার নাতিকে গুম করবে বলে হুমকি দেয় এমনকি তাকে এবার স্কুলে পরীক্ষা দিতে পর্যন্ত দিতে দেয় নাই তারা। আমার বাড়ি তাদের নামে লিখে দিতে বলে না হলে পুলিশ দিয়ে জোর করে তারা আমার বাড়ি লিখিয়ে নিবে বলছে । ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, আমি তো টাকা দিবো শুধু সময় চেয়েছি তারা তা মানছেনা, থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছি না। এলাকার প্রভাবশালী ছত্রছায়ায় থাকা রুমা, ফুজিয়া, মুক্তা,  সজল, সজিব, আযম ও নাসির এরাই বেশি বেপরোয়া ভাবে গালমন্দ সহ মারধর করে আসছে আমাদের। অনুসন্ধানে জানা যায়, রুমা পেশায় একজন দালাল, ফুজিয়ার স্বামী পেশায় আদম ব্যবসায়ী, সজল এলাকায় নেট ব্যবসায়ী তার বিশাল এক বাহিনী রয়েছে। রুমা, সজিব ও মুক্তার সাথে আমাদের কোনো দেনাপাওনা নেই। তবুও তারা সুদে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে মারতে আসে। ভুক্তভোগীর স্বামী অসুস্থ বাবুল বলেন, বর্তমানে এরা ছাড়াও যাদের সাথে কোনো লেনদেন নেই তারাও এসে হামলা করে মারধর করছে ভূয়া স্ট্যাম্প বানিয়ে ঘুরছে। বাড়ী করার সময়ও অনেক চাঁদা দিতে হয়েছে এলাকার সন্ত্রাসীদের। এখন হামলাকারীদের নজর পড়েছে আমার বাড়ীটি তারা দখল করবে এমনকি তারা পারলে আজই বিক্রি করে দেয়। যত টাকা নিয়েছি তার বেশি সুদ দিয়েছি। আমি এখন অসুস্থ তাই তিন চারমাস সুদ দিতে পারিনাই এই কারণে তারা আমার ও আমার পরিবারের  উপর বর্বর নির্যাতন করে চলেছে।  আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাই আমাকে ও আমার পরিবারকে রক্ষা করুন।  আমাকে যদি ওরা এভাবে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতে থাকে তাহলে আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা। আমি যে ভাবে পারি সবার টাকাই দিচ্ছি এবং দিয়ে দিবো। আমি যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাদের সবার স্ট্যাম্প আছে। আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছিনা বাড়ী ঘর ফেলে। মারধরের বিষয়ে সুদে ব্যবসায়ী ফুজিয়া বলেন, আমরা কেউ মারধর কারিনাই, এমপি  ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা বলছে তোরা যারা টাকা পাবি সবাই গিয়ে টাকা চা তাই আমরা গেয়েছি, থানার ওসি সাহেব একটা কমিটি করে দিছে সেই কমিটির লোকজন গিয়ে টাকা চাইছে। এখানে কোনো প্রকার ভাংচুর বা মারধর হয়নি। এক প্রশ্নে  ফুজিয়া বলেন জোর করে আমরা স্ট্যাম্পে সই নেইনি পুলিশের সামনেও মারধর করিনাই।  এবিষয়ে পল্লবী থানার এসআই জিল্লুর রহমান বলেন, ঘটনার ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে বোঝেন তো সবাই টাকা পায় আমি একা পুরুষ তারা সবাই নারী। তারপরও যতটুকু সামলানো যায় করেছি। এমপি স্যারকে আমি সব বলেছি ফুজিয়ারা সবাই সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে পরে এমপি স্যার শুনে বিশাল রাগ করেছে ফুজিয়াকে। এমপি স্যার বলছে আমি বলেছি তোদের কোনো রকম বিশৃঙ্খলা করবিনা তারপরও করলি। যা আমার কাছে আর আসবিনা। অবশ্য ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা সুদ দিয়েছে ভুক্তভোগী নারী এটা শুনে এস আই জিল্লুর বেশ উৎসাহ নিয়ে দফায় দফায় ভুক্তভোগী নারীর বাসায় সুদের ব্যবসায়ীদের নিয়ে আড্ডা জমাচ্ছেন নিত্যদিনই।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please