নিজেস্ব প্রতিনিধি : শিক্ষা খাতে সরকারের নানা উদ্যোগের পরও এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিক্ষার্থী স্কুল পর্যায়েই ঝরে পড়ছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়া, বইখাতাসহ লেখাপড়ার উপকরণ নষ্ট হয়ে যাওয়া, তাৎক্ষণিকভাবে স্কুলের ব্যয় বহনে অক্ষমতা, বাবা-মাকে গৃহস্থালি কাজে সহায়তা, উপার্জনে বা ভাগ্যান্বেষণে নেমে পড়া, লেখাপড়ায় আর আগ্রহ না পাওয়া, স্কুলে যেতে নিরাপদ বোধ না করা, যাতায়াতে যানবাহন সঙ্কট সমস্যা। তবে ছেলে ও মেয়েদের স্কুল ছেড়ে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাবা-মাকে ঘরের বা সংসারের কাজে সহায়তা দেয়া। ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৭ দশমিক ১৫ আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশই বাবা-মাকে ঘরের বা আয়-উপার্জনের কাজে সহায়তার কারণে স্কুল আসে না। তাছাড়া স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে এর পরের সবচেয়ে বড় বাধা দুর্যোগ-পরবর্তী যানবাহনের সঙ্কট। ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ মেয়ে ওই কারণে স্কুলে যায় না। তাছাড়া উভয়ের ক্ষেত্রে স্কুলে না যাওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে লেখাপড়ায় আগ্রহ না থাকা। ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছেলে এবং ১১ দশমিক ২২ শতাংশ মেয়ে ওই কারণে স্কুলে যায় না। সরকারের দুটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ৩৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। প্রথম শ্রেণীতে ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ জন এসএসসি পর্যন্ত পৌঁছায়। বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে বর্তমানে ঝরে পড়ার হার ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৬১ দশমিক ৪ জন পিইসি পরীক্ষা পাস করে। কিন্তু তাদের মধ্যে আবার ৪ জনই ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় না। আর যে ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন মাধ্যমিকে ভর্তি হচ্ছে, তাদের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির হার ৬৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। আবার ওসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ দশমিক ২৭ শতাংশ এসএসসি পর্যন্ত পৌঁছায়। বাকি ৩৬ দশমিক ৭৩ ভাগ ঝরে পড়ছে। বর্তমানে প্রাথমিকে ২ কোটি ৯ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। আর মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে এক কোটি ৯৭ লাখ ১১ হাজার ৩৬ জন। ওই হিসাবে বর্তমানে দেশে শিক্ষার্থী ৪ কোটিরও বেশি। সূত্র জানায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে গত বছর শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ কম। বিগত ২০১৮ সালে ওই ভর্তি হার ছিল ৬৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই বছরের মধ্যে তুলনা করা হলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র বেশি। বিগত ২০১৮ সালে যেখানে পঞ্চম শ্রেণী পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ভর্তি হয়েছিল, সেখানে গত বছর ভর্তির হার ৬০ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে ছাত্রী ভর্তি হার তেমন একটা কমেনি। ২০১৮ সালে তা ছিল ৭৪ দশমিক ৬৮ যা, গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪২ হাজার ৫২১টি। ওসব প্রতিষ্ঠানে এক কোটি ৯৭ লাখ ১১ হাজার ৩৬ জন লেখাপড়া করে। তাদের মধ্যে ৫০ দশমিক ১১ শতাংশ ছাত্রী। আর ওসব শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯১৩ জন। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষক ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ওসব শিক্ষার্থীর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে রয়েছে এক কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৫৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ২১০ জন। তাতে ছাত্রী ৪৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর মাদ্রাসায় বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থী ২৪ লাখ ৯১ হাজার ২৬৮ জন। তার মধ্যে ছাত্রী ৫৫ শতাংশ। তাছাড়া পেশাগত শিক্ষায় ছাত্রছাত্রী রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৩ জন। তার মধ্যে ৫৪ শতাংশই নারী। শিক্ষক শিক্ষায় আছে ৩৫ হাজার ৩৯ জন, যাদের মধ্যে ৪৬ শতাংশের বেশি ছাত্রী। আর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ১১ লাখ ১৭৭ শিক্ষার্থী আছে। তাতে নারী ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। উল্লিখিত হিসাব অনুযায়ী, মাধ্যমিক পরবর্তী উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিকে লেখাপড়া করে ৪৪ শতাংশ। মাধ্যমিকে ২২ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ১৫ শতাংশ, স্নাতকে ১৫ শতাংশ, উচ্চশিক্ষায় ৪ শতাংশ। এদিকে বিগত ২০১৮ সালে নিম্ন মাধ্যমিকে নারী শিক্ষার্থী ছিল ৫৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। কিন্তু তা কমে ২০১৯ সালে হয়েছে ৫৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। মাধ্যমিকে ২০১৮ সালে ছিল ৫১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে হয়েছে ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিকে ২০১৮ সালে ছিল ৪৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে হয়েছে ৪৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মাধ্যমিক পরবর্তী অন্য ধারার শিক্ষায় আছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে ছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। উচ্চশিক্ষায় স্নাতকে গত বছর ছিল ৪৩ দশমিক ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী, যেখানে ২০১৮ সালে ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর মাস্টার্সে গত বছর ছিল ৩৬ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে ছিল ৩৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। অন্যদিকে সর্বনিম্ন বরাদ্দ শিক্ষায়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মাঝখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেশ বাড়ানো হয়েছিল। ওই বছর বরাদ্দ ছিল বাজেটের ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ৮ বছরের মধ্যে ওটাই ছিল সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ শিক্ষায়।