নিজেস্ব প্রতিনিধি : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জটের শঙ্কা বাড়ছে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্তে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছিল। কিন্তু ইউজিসি তা বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে এবং সক্ষমতা যাচাই না করেই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে সরকার। একইভাবে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করে। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা সাময়িকভাবে পূরণের জন্যই শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ইউজিসি এক নির্দেশনায় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানায়। তবে সর্বশেষ ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে ক্লাস নিতে আহ্বান জানালেও পরীক্ষা ও মূল্যায়ন বন্ধ রাখার অনুরোধ জানায়। সূত্র জানায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম রীতিমতো স্বীকৃত। বাংলাদেশেও বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক সময়ে শ্রেণিকক্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম, অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া ও গ্রহণ, মূল্যায়ন ও গ্রেডিং ইত্যাদি করে থাকে। শিখন শেখানো কার্যক্রম স্বচ্ছ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ব্যবস্থা চালিয়ে আসছিল। ফলে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের এ সময়টাতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। বরং যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে ছিল তারাও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস টেস্ট ও মূল্যায়নও শুরু করে। কিন্তু ইউজিসির সিদ্ধান্তে হুট করে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে, বাড়বে সেশনজট। তাতে কার্যত প্রায় ছয় মাস শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি ক্লাস নিতে বলে আবার বন্ধ করতে বলেছে। যদিও ক্লাস টেস্ট না নিলে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে না। কিন্তু ইউজিসি বলছে, ক্লাস নিলেও ক্লাস টেস্ট নেয়া যাবে না, মূল্যায়ন করা যাবে না। এতে শিক্ষার্থীরা একটি সেমিস্টার পিছিয়ে পড়বে। কারণ করোনা পরিস্থিতি আজই স্বাভাবিক হচ্ছে না। আর সেজন্য বসে থাকলে সেশনজটে পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে ১৫ দিন বা তার কমবেশি কিছু সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সে সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। তখন অবশ্যই সেশনজট তৈরি হবে। এদিকে ইউজিসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) সভাপতি শেখ কবির হোসেন জানান, এপিইউবি;র সাথে কোনো আলোচনা না করে ইউজিসি একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে তো সেশনজট হবেই। তাতে ক্ষতি হবে শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ জানান, ইফজিসির পক্ষ থেকে অনলাইনে ক্লাস নিতে বলা হয়েছিল, যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় নিবিষ্ট থাকে। অথচ অভিযোগ আসছে, কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিতে চাইছে। কেউ কেউ অনলাইনে নামমাত্র পরীক্ষা নিয়ে যা তা করতে চায়। সারা পৃথিবীতে এখন পরীক্ষা স্থগিত, শিক্ষার্থীরা জীবন শঙ্কায়। একটা আতঙ্ক, প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। তার মাঝে তারা পরীক্ষা দেবে কী করে? অনলাইন পরীক্ষায় কেউ আছে ঢাকায়, কোনো শিক্ষার্থী আছে কক্সবাজারে, কেউ বাগেরহাটে। সবার তো ইন্টারনেট বা স্মার্ট ফোন নেই। আবার এ পরীক্ষায় নকল হবে না, বাসায় বসে কেউ বই খুলে লিখবে না, তা কে নিশ্চিত করবে? ইফজিসি সিদ্ধান্ত দেয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনর্বিবেচনার জন্য একটা আপিল করেছিল। এ নিয়ে কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে তা আলাপ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরো ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। কমিশনের কেউ এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে পরীক্ষা নিতে সম্মতি দেয়নি। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তো অপেক্ষা করছে। সেশনজট তাদের কি হবে না? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও অনলাইনে সামার সেমিস্টারের ভর্তি চালিয়ে যেতে চায়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত পরিস্থিতি কী হয় দেখা হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিস্থিতি বুঝে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রীও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।