মোঃ মিলন ঢালী: কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু হাসু-কাসু বাহিনীর মূল হোতা মোঃ আবুল হাসেম @ হাসুকে বিদেশী অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। গত ১২/১২/২০১৯ তারিখ রাত অনুমান ২১.৩০ ঘটিকার সময় গোপন সংবাদের প্রেক্ষিতে র্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল পুলিশ সুপার নরেশ চাকমা এর নেতৃত্বে ডিএমপি ঢাকার, শেরে বাংলা নগর থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ০১টি বিদেশী পিস্তল, ০১টি ম্যাগজিন, ০২ রাউন্ড গুলি এবং ১১২২ পিস ইয়াবাসহ হাসু-কাসু বাহিনীর প্রধান (মূল হোতা) আসামী মোঃ আবুল হাসেম@ হাসু (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা শহরের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হাসু- কাসু বাহিনী মিরপুর, আগারগাঁও ও শেরে বাংলা নগর সহ আশেপাশের এলাকার এক মূর্তিমান আতঙ্ক। চাঁদাবাজি, ভুমি দখল, অপহরণ ও খুন ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ঠিকাদার, এমনকি চাকুরীজিবীদের নিকট হতেও সে নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায়সহ এলাকায় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করে। হাসু-কাসু বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। হাসু-কাসু বাহিনীর মূল হোতা হাসুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২ টির অধিক মামলা রয়েছে। আইন শৃংখলা বাহিনী হাসুকে বিভিন্ন ভাবে গেফতারের চেষ্টার করলে এবং কুখ্যাত সন্ত্রাসী হাসু-কাসুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও সে অত্যান্ত বিচক্ষন ও তীক্ষè বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়ায় আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। সে দীর্র্ঘদিন যাবৎ আগারগাঁও, তালতলা ও শেরে বাংলা নগর এলাকায় প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে এলাকার লোকজনের নিকট হতে চাঁদাবাজি, অবৈধ ভাবে জমি দখল ও মাদক বিক্রয় করে আসছে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে হাসু-কাসু বাহিনীর মূল হোতা। তার কাজ হচ্ছে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের পরিচালনাসহ এলাকায় চাঁদাবজি, ভ‚মি দখলসহ অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রয় করা। হাসুর নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক অস্ত্র, চাঁদাবাজি, খুন, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। র্যাব–৪ এর অভিযানে আগারগাঁও তালতলা মোল্লা পাড়া একটি বিস্কুট ফ্যাক্টুরী থেকে ১১২১ পিস ইবা একটি বিদেশি পিস্তল ২ রাউন্ড গুলি সহ গ্রেপ্তার আবুল হাসেম হাসু , অনুসন্ধানে জানা যায় আগারগাঁওয়ের ডিস ব্যবসায়ী মিল্টন হত্যা মামলায় ৩১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খুনি হাসু-কাসুুর উত্থান ছিল নিছক রিকশা চোর হিসেবে। নব্বইয়ের দশকে আগারগাঁও বস্তিতে রিকশা চোরদের সর্দার হিসেবেই ছিল তার পরিচিতি। ওই সময় হাসু-কাসুর দুই ভাই রিকশা চুরির বিশাল সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন। আগারগাঁও বস্তিতে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবাধ যাতায়াতের ফলে তৎকালীন সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে হাসু ও কাসুর সখ্য গড়ে ওঠে।
গ্রেপ্তার কৃত হাসু
পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড় শুরু হলে সন্ত্রাসীরা তাদের অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র হাসু ও কাসুর রিকশা গ্যারেজের মধ্যে মাটি খুঁড়ে রেখে দেশ ছেড়ে পালায়। পরে এসব অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র পুঁজি করেই রিকশা চোরা হাসু-কাসু রাতারাতি সন্ত্রাসী বনে যায়। বাড়তে থাকে তাদের অপরাধের পরিধি, জড়িয়ে পড়ে খুন-খারাবি, মাদক বাণিজ্যে। অস্ত্রবাজ বাহিনী গড়ে তুলে হাসু-কাসুরা টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি আর ভাড়াটে খুন-খারাবির কর্মকাণ্ডে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। তাদের দাবিকৃত চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে এ এলাকার ডিস ব্যবসায়ী জামিল হোসেনকে তার বাসায় ঢুকে গুলি করে হত্যা করে কাসু নিজে। এরপর প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী বাবুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে সে বনে যায় বাহিনীর প্রধান। র্যাব ও ডিবির অভিযানে এর আগে আবুল হাসেম হাসু অস্ত্রসহ দুবার গ্রেফতার হয়। আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে দিব্যি অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনা করে যাচ্ছিলো । হাসু, কাসুসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলানগর, মিরপুর, কাফরুলসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত দুই ডজন মামলা আছে। এর মধ্যে খুন-খারাবি, ডাকাতি, অস্ত্র, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা আছে ১৫টি। বাকিগুলো জায়গাজমি জবরদখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ, টেন্ডারবাজি-সংশ্লিষ্ট।
Leave a Reply