নিজেস্ব প্রতিনিধি : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ব্যাপক দরপতনেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেলের মজুদ বাড়াতে পারছে না। মূলত তেল মজুদের ট্যাঙ্কের অভাবেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে-বিদেশে তেলের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফল হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে জ্বালানি তেলের বড় মজুদ ক্ষমতা রয়েছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তেলের ট্যাঙ্ক ভাড়া নেয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। আর দেশে যাদের মজুদ ক্ষমতা রয়েছে তারাও সুযোগ পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছে। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বিপিসির পক্ষে এখন তা বেশি করে কিনে রাখা হচ্ছে না। তবে বিপিসি সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ব বাজারে এখন স্মারণকালের সবচেয়ে কম দরে জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে। ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১৫ ডলারের নিচে দাঁড়িয়েছে। আর ফিউচার মার্কেটে আগামী মে মাসের জন্য করা চুক্তিতে তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ‘শূন্য’ ডলারেরও নিচে। তেলের এতোটা দরপতন আর কখনো হয়নি। মূলত করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে টানা লকডাউনের ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় এই অস্বাভাবিক দরপতন দেখা দিয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্যানুযায়ী বিশ্বের সব থেকে বড় তেল মজুদ ক্ষমতার সবটাই ভাড়া হয়ে গেছে। তাতে ব্যবসায়ীরা কম দামের তেল কিনে মজুদ রাখছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করা সম্ভব। সূত্র জানায়, বিপিসির পক্ষ থেকে প্রথমে দেশের বাইরে তেল মজুদ রাখার জন্য যোগাযো করা হয়েছিল। কিন্তু তেল রাখার ভাড়া এখন অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। ফলে সেখানে তেল মজুদ রেখে খুব একটা লাভজনক হবে না। তাছাড়া দেশের বেসরকারি সংরক্ষণাগারগুলোরও একই অবস্থা। ফলে তেলের দাম কমাতে বিপিসির খুব একটা আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তবে দেশের বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর উদ্যোক্তরা সহায়তা করলে হয়তো জ¦ালানি মজুদ গড়ে দেশ লাভবান হতে পারতো। যদিও ওই কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা ভাড়া দিচ্ছে সরকার। আর সরকার থেকে ওসব কেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধ করা হলেও তাতে তেল নেয়া হচ্ছে না। এভাবে দেশের উদ্যোক্তারাই প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন প্রয়োজনের সময় তাদের অয়েল ট্যাঙ্কারগুলোর জন্য কেন ভাড়া গুনতে হবে। ভাড়া তো সরকারের আরেকটি বিভাগ প্রদান করছেই। এক্ষেত্রে সরকার যেহেতু ওসব কেন্দ্রের ভাড়া দেয় তাই কেন্দ্রটি কখন কিভাবে ব্যবহার হবে তার এখতিয়ারও সরকারের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও তা মানা হচ্ছে না। সূত্র আরো জানায়, দেশীয় কোম্পানি ওমেরার ১ লাখ টন এবং ইউনাইটেড পাওয়ারের আরো ৪০ হাজার টনের মতো মজুদ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রারও সরবরাহ কমে গেছে। ফলে চাইলেও এখন বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে তেল কিনে এনে মজুদ করা সম্ভব নয়। বিদ্যমান এই পরিস্থিতি কতো দিন চলবে তা কেউ বলতে পারছে না। সঙ্গত কারণে অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতেই বৈদেশিক মুদ্রার ভাল রিজার্ভ রাখা জরুরি। না হলে দেশ বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা অত্যাধিক ভাড়া চাইছে। তাও নিশ্চিতভাবে তেল রাখতে দিতে পারবে এমন নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না। তাছাড়া দেশে যাদের তেল রাখার মতো জায়গা আছে তারাও প্রতি টনের জন্য প্রতি মাসে ৬ ডলার ভাড়া চাইছে। বর্তমানে জ¦ালানি তেলের যে মজুদ আছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও ৩ মাস পর্যন্ত চলা যাবে। ফলে এখানে এখন তেল এনে মজুদ রাখলে তা ব্যবহার হবে চার মাস পরে। সেজন্য যে ভাড়া পরিশোধ করা হবে তা অত্যাধিক। সেজন্য আমরা ইচ্ছা থাকলেও তা করা যাচ্ছে না।