মোঃ সোলায়মান : করোনা বিপর্যয়ে রাজধানীর তিনটি স্থানে ব্যতিক্রমী ত্রাণ বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদিন তিনশ’ পরিবারের মাঝে নানারকম কাঁচা সবজি বিতরণ করা হচ্ছে, মাতুয়াইল এলাকায়ঘিরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খামারের মাছ। অন্যদিকে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় ঈদ উপহার হিসেবে পোলাউর চাল, সেমাই, চিনির পাশাপাশি পৌঁছানো হচ্ছে করোনা প্রতিরোধী ড্রেস পিপিই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিতরণ করা এসব ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে নানারকম আলোচনা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম বাছেক তার ব্যক্তি উদ্যোগে ১ মে থেকেই প্রতিদিন ৩০০ পরিবারে শাক সবজিসহ কাঁচা তরিতরকারি পৌঁছে দিচ্ছেন। ওয়ার্ড এলাকাকে ছয়টি মহল্লায় ভাগ করে একেকদিন একেক মহল্লায় এ সবজি ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। মহল্লাগুলো হচ্ছে,নতুন বাজার, বাঁশতলা-শাহজাদপুর, খিলবাড়ীরটেক, বোটঘাট, নুরেরচালা ও সাঈদনগর।ওয়ার্ড কাউন্সিলর তার কয়েক সহযোগীকে নিয়ে ফজরের নামাজ শেষ করেই খিলক্ষেত সবজি আড়তে হাজির হন। সেখান থেকে পাইকারী দরে বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি, লাউ, মিস্টি লাউ, আলু, মরিচ, ধনে পাতা, চিচিঙ্গা, করোল্লা, কচু, কাকরোল, পটল কিনে আনেন। এক প্রকার শাক ও দুই ধরনের সবজি মিলিয়ে প্যাকেট বানিয়ে ভ্যানযোগে মহল্লায় নিয়ে হাজির হন কাউন্সিলর, এরপর তা বিতরণ করেন ঘরে ঘরে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের ব্যাপারে কাউন্সিলর মো: শফিকুল ইসলাম বাছেক জানান, সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণকালে তার মা প্রশ্ন তোলেন অভাবগ্রস্ত মানুষজন তরকারী পাবে কোথায়? চাল দিয়ে ভাত রান্না করে তা খাবে কি দিয়ে? ত্রাণের চালের সঙ্গে শাক সবজি কিছু কিনে দেয়ার জন্য মায়ের জমানো ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দেন কাউন্সিলর ছেলে বাছেকের হাতে। সেই থেকেই চালু রয়েছে তার সবজি ত্রাণের কার্যক্রম। রাজধানীর মাতুয়াইল বোর্ড অফিসের আশপাশ এলাকার দুই শতাধিক পরিবার খাদ্য সহায়তা হিসেবে পাচ্ছেন ইন্দুরদী ফিস প্রজেক্টের মাছ। প্রতি সপ্তাহেই পর্যায়ক্রমে এসব পরিবারে মাছ পৌঁছে দেওয়া হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে। ইন্দুরদী ফিস প্রজেক্টের কর্ণধার মো: আজিজুর রহমান মিন্টু জানান, সপ্তাহে একেকটি পরিবারকে সর্বোচ্চ এক কেজি পরিমাণ মাছ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই নিয়মিত এ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এদিকে ব্যতিক্রম ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকাতেও। সেখানে বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নূরে আলমের উদ্যোগে দেড় শতাধিক পরিবারের জন্য বিশেষ ঈদ উপহারেরপ্যাকেট পাঠিয়েছেন তার সঙ্গে এক-দুই সেট করে করোনা প্রতিরোধী ড্রেস ‘পিপিই’ যুক্ত করেছেন। এসআই নূরে আলম জানান, ঈদের পোলাউর চাল, চিনি, সেমাই, মসলাপাতির সঙ্গে ন্যূনতম একটা পাঞ্জাবী দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পাঞ্জাবীর পরিবর্তে করোনা প্রতিরোধী পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, মাক্স, হ্যান্ডসগ্লাভস প্রদান করাটাই বেশি জরুরি বলে মনে হয়েছে। মূলত: মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবারগুলোকে মাথায় রেখেই ঈদ উপহার নামে বিশ কেজি ওজনের ব্যাগ নানা রকম পণ্য দিয়েই ভর্তি করা হয়েছে।