নিজেস্ব প্রতিনিধি : দেশে পাটবীজ বপনের মৌসুম চলছে। কিন্তু বীজের অভাবে কৃষকরা পাটবীজ পবন করতে পারছে না। এপ্রিল মাসের শেষ বা মে মাসের শুরুটাই পাটবীজ বপনের মৌসুম। কিন্তু এবার মৌসুম শেষ হতে চললেও এখনো ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পাটবীজ আমদানি সম্পন্ন করা হয়নি। এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ পাটবীজও। এপ্রিল মাসের শুরুতে চ্যাংড়াবান্ধা বন্দর দিয়ে মাত্র ১২০০ টন পাটবীজ দেশে এসেছে। আর প্রায় এক মাস ধরে গাড়ির চালক ও সহকারী সঙ্কটে পেট্রাপোল বন্দরে পড়ে আছে এক হাজার টন বীজ। ফলে মৌসুম শেষ হতে চললেও ওসব বীজ না আসায় এবার দেশের পাটের আবাদ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। বীজ ব্যবসায়ী এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে ৮০-৯৫ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপন্ন হয়। চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে ৬ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৮০ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে পাট আবাদে প্রায় ৫ থেকে ৭ কেজি পাটবীজের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশে উৎপাদিত বীজের মাধ্যমে চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়। বাকি চাহিদার ৮০-৮৫ শতাংশ ভারতীয় বীজের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। সামান্য কিছু বীজ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চীন, মিয়ানমার, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করে। চলতি অর্থবছর ভারত থেকে সাড়ে ৪ হাজার টনের বেশি বীজ আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দেশে মাত্র দেড় হাজার টন বীজ এসেছে। যদিও পাটবীজের চাহিদা পূরণে কৃষি মন্ত্রণালয় এবার প্রায় ৬ হাজার টন পাটবীজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন গত ২২ মার্চ থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। ওই কারণে কৃষিজ পণ্যসহ পাটবীজ বোঝাই ট্রাকগুলো ওপারে ভারতের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় আটকে ছিল। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ৪ এপ্রিল বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ওসব পাটবীজবাহী ট্রাকগুলো প্রবেশ করে। ১৪ দিন ওপারে আটকে থাকার পর বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ৬২ ট্রাক পাটবীজ আমদানি হয়। তাতে প্রায় এক হাজার ২০০ টন পাটবীজ ছিল। কিন্তু ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের কোয়ারেন্টিন জটিলতার কারণে পেট্রাপোল থেকে বাংলাদেশে ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে না। পেট্রাপোলে আরো এক হাজার টন পাটবীজ আটকে পড়েছে। ওই পাটবীজ আমদানি পর আরো দেড় হাজার টন পাটবীজ আমদানি হতে পারতো। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পাটবীজ ব্যবসায়ীরা যেমন চিন্তিত হয়ে পড়েছে, তেমনই পাটের আবাদ নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে। কারণ কয়েকদিনের মধ্যেই মৌসুম শেষ হয়ে যাবে। আর সময়মতো বীজ না পেলে বীজও বিক্রি করতে পারবে না অধিকাংশ আমদানিকারক। আবার ওসব বীজ আগামী মৌসুমের জন্যও রাখা যাবে না। পাশাপাশি বন্দরে আটকে থাকার কারণে বীজের মানও নষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত ওসব বীজ আমদানি কীভাবে করা যেতে পারে সে বিষয়ে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমদানিকারকরা মনে করছেন।
সূত্র আরো জানায়, ভারত থেকে পাটবীজ আমদানি বন্ধ থাকায় বিপাকে রয়েছে দেশের কৃষকরা। বিষয়টি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরাও চিন্তিত। কারণ পাট উৎপাদন ছাড়াও পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা আয় করে থাকে। যদি বীজ সংকটে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাট চাষ করা না যায়, তাহলে রফতানি আয়েও তার প্রভাব পড়বে। এদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি বেশ জটিল অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ পাটবীজ না এলে আবাদ পিছিয়ে যেতে পারে।
Leave a Reply