22nd, September, 2023, 8:41 am

বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির আশঙ্কা বাড়ছে

মীর আলাউদ্দিন : বিটুমিনের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের হাজার হাজার কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কার্যক্রম। মূলত করোনা ভাইরাসের প্রভাব সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের অন্যতম উপকরণ বিটুমিন আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দেশের সড়ক অবকাঠামো খাত উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। আর এ অবস্থা দীর্ঘয়িত হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তির আশঙ্কা বাড়ছে। ইতিমধ্যে বিটুমিন সঙ্কটে বন্ধ হয়ে পড়েছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রায় ১০ হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ। পরিকল্পনা কমিশন এবং এলজিইডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়ে থাকে। ওই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এলজিইডির অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামো ও সড়ক নির্মান কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। বর্ষা এড়াতে দেশের সড়ক নির্মাণ কাজে মূলত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বেশি গতি পেয়ে থাকে। কিন্তু এই পিক সময়ের শুরুতেই এলজিইডির সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রমে নভেল করোনা ভাইরাসের ধাক্কা লেগেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলজিইডির মোট ১৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের পরিকল্পনা ছিল। আর ওই পরিকল্পনার মধ্যে ছিল ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা করা এবং ১৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্থাটি পরিকল্পনার মাত্র ৪০ শতাংশ বা প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করতে পেরেছে। বাকি রয়েছে ১০ হাজার ৫০০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ। মূলত বিটুমিন আমদানি বন্ধ থাকার কারণে এলজিইডি ৬০ শতাংশ সড়কের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি করোনার কারণে শ্রমিক সঙ্কট এবং অন্য বিষয়গুলোও রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এসব কাজ শেষ করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে সড়ক নির্মাণে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ওই চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ সরবরাহ করে থাকে। বাকি ৯০ ভাগ বিটুমিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশিদিন মজুদ করে রাখা সম্ভব নয় বলে প্রতি মাসেই বিটুমিন আমদানি করতে হয়। সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার টন বিটুুমিনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক যোগাযোগ এক প্রকার বিচ্ছিন্ন। ফলে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান বিটুমিনের আমদানিও বন্ধ। আর বিটুমিন সঙ্কটে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এলজিইডির চলমান সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজও প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং বিটুমিন আমদানি করা গেলে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুররু করা সম্ভব হবে বলে এলজিইডি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক রয়েছে। ওসব সড়ক ও মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানেই সম্প্রসারণের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকার দেশের প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ওসব কাজে প্রচুর পরিমাণে বিটুমিন প্রয়োজন। তবে সম্প্রতি দেশের অন্যতম বড় করপোরেট গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপ বিটুমিন উৎপাদনে কারখানা চালু করেছে। তাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতাও দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম। প্রতিষ্ঠানটির আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৯ লাখ টন উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিলে বিটুমিন না পাওয়া গেলে ওসব নির্মাণ কাজ ব্যাহত হবে। ফলে এডিপি বাস্তবায়ন যেমন পিছিয়ে যাবে, তেমনই গ্রামে মানুষের চলাচলসহ পণ্য পরিবহন ব্যাহত হতে পারে। পাশাপাশি পরিবহন ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে এডিপির বরাদ্দকৃত মোট অর্থের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দকৃত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তালিকায় রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই বিভাগে চলতি অর্থবছরে মোট এডিপির প্রায় ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ২৯ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। বিভাগটি এ সময়ে ২২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৪৫ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে। কিন্তু ওসব প্রকল্পের কার্যক্রম বিটুমিন সঙ্কটে চলমান না রাখতে পারলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অনেকটাই পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে সড়কের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রসঙ্গে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. মতিয়ার রহমান জানান, সড়ক নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপযুক্ত সময় জানুয়ারি থেকে মে মাস। ওই হিসেবে কাজ শুরু করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করা গেছে। বাকি ৬০ শতাংশ কাজও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী। কিন্তু বর্তমানে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিটুমিন আমদানি করতে না পারায় কাজ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি যদি এ মাসের মধ্যে ভালো না হয়, তাহলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মাধ্যমে ইস্টার্ন রিফাইনারি উৎপাদিত বিটুমিন নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা নিতে হতে পারে। তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের অভাবে বিদেশ থেকে আনা বিটুমিন অনেক ক্ষেত্রেই মানে খারাপ হয়। আগামীতে সব সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের কাজে দেশে উৎপাদিত বিটুমিন ব্যবহার করতে পারলে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রায় সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমে এক ধরনের গতিহীনতা রয়েছে। প্রকল্পের কোথায় কী ধরনের বাধা রয়েছে, সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রণালয়। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কার্যক্রমগুলো কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণে কী ধরনের বাধা রয়েছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই সব ধরনের উদ্যোগ একত্রে নিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please