কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে কুড়িগ্রামে। ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীপমার ৬৪ সেমি এবং চিলমারী পয়েন্টে ৭৭ সেমি এবং ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেলেও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেমি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার ফলে জেলার ১৬টি নদ-দীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় দু’লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। করোনার কারণে টানা তিনমাস ঘরে বন্দি মানুষজনের কাছে চরম দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে চলমান বন্যা। হাতে কাজ না থাকায় বিপাকে পরেছে দিনমজুর ও নিন্ম আয়ের মানুষ। বন্যায় মানুষের শুকনা খাবার,বিশুদ্ধ পানিসহ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দিনে-রাতে বৃষ্টির কারণে জ্বালানী খড়-খড়ি নস্ট হয়ে যাওয়ায় বানভাসীদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। অপরদিকে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানাযায়, বন্যায় ১ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে নিমজ্জিত বা ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার হেক্টর বলে সংম্লিষ্ট কৃষক ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে জানা গেছে। অপরদিকে মৎস বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ইতোমধ্যে শতাধিক পুকুর প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছচাষীরা। বন্যার কারণে ব্রহ্মপূত্র অববাহিকার গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে সকল ধরণের ফসলাদি তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। এছাড়াও থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে জ¦ালানী নস্ট হওয়ায় রান্না করতে পারছে না ভুক্তবোগী জনপদের মানুষ। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যার ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিরক্ষা বাঁধ। সদ্য মেরামত করা এ বাঁধগুলো এখন হুমকীর মূখে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরের কৃষক জব্বার, মজিদ ও দিনমজুর আব্বাস আলী জানান, বৃষ্টির কারণে রান্না করতে না পারায় দুপুর পর্যন্ত খাওনের কোন ব্যবস্থা হয়নি। একই গ্রামের সরবেশ আলী জানান, গরু দিয়েই আমার সংসার চলে। ঘরে ১২টা গরু রয়েছে। এখন মানুষের চেয়ে গো-খাদ্য নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। ইতোমধ্যে বানভাসীদের জন্য ৩০২ মে.টন চাল এবং ৩৬ লক্ষ ৬৮হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা কবলিতরা খাদ্য সংকটে না পরে এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করাসহ নিরাপদে সড়িয়ে নেবার বিষয়ে জেলা-উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।