নিজেস্ব প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে টানা ছুটিতেও চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে সব ধরনের পণ্য খালাস হচ্ছে। তবে পণ্য ছাড়িয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ দেয়া হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, চিকিৎসা ও সেবাসামগ্রী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্যের হ্যান্ডলিং আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও শিল্পপণ্যের আমদানি পরিমাণ কমেছে। আর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেলসহ নানা ধরনের ভোগ্যপণ্য ট্রেনে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হচ্ছে। সেজন্য মালবাহী ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে বন্দর দিয়ে বাল্ক পণ্য (খাদ্যশস্য ও সাধারণ পণ্য) হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ২৪ হাজার টন। যদিও গত বছরের একই সময়ে ওই বন্দরে খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭ হাজার টন। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্যের হ্যান্ডলিং বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরে মূলত বাল্ক ও কনটেইনারবাহী দুই ধরনের জাহাজে করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি হয়। তার মধ্যে বাল্ক কার্গো বা খোলা পণ্যবাহী জাহাজে খাদ্যশস্য ও সাধারণ পণ্য আমদানি হয়। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের বহির্নোঙরে প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত জাহাজ ওয়ার্কিং (পণ্য স্থানান্তররত) থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরের বহির্নোঙরে গড়ে অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী জাহাজ অবস্থান করে। একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রতিদিন ১৬টি করে কনটেইনার জাহাজ খালাস কার্যক্রমে ছিল। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে পণ্যের ৯৩ শতাংশ আমদানি-রফতানি সম্পন্ন হয়। এমনকি ৩৫ থেকে ৯০ হাজার টন খোলা, বস্তাবন্দি ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজগুলোকেও বহির্নোঙর ও কুতুবদিয়া এলাকায় অবস্থান করে পণ্য খালাস করতে হয়। তবে বন্দরের জেটিতে কনটেইনারবাহী বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) ভেড়ার সুযোগ নেই। মূলত বড় আকারের ফিডার জাহাজের (ফিডারম্যাক্স) মাধ্যমে কনটেইনার আসে। কিন্তু বছরভিত্তিক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছরের তুলনায় সাধারণ পণ্যের হ্যান্ডলিং বাড়লেও কাস্টমসের হিসেবে পণ্য আমদানি কমেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে পণ্য আমদানি প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। তারপরও সরকারি ছুটিতে ন্যূনতম জনবল দ্বারা নিত্যপণ্য এবং চিকিৎসা ও সেবাপণ্য শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষ। বাকি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করলেও এলাকা ছেড়ে না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে আমদানি পণ্য খালাসের জন্য পণ্যভেদে যেসব সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেগুলো হলো শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিএসটিআই, ব্যাংক, উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র ও পরমাণু শক্তি কমিশন। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ বন্ধ রাখলে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে না।
সূত্র আরো জানায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রামের মালবাহী ট্রেনগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে। সাধারণত প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি মালবাহী ট্রেনে পণ্য পরিবহন করা হলেও বর্তমানে ৬টি ট্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করলেও বন্দর দিয়ে আমদানি খুব একটা কমেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে। আর ওসব পণ্য দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে ভূমিকা রাখছে মালবাহী ট্রেনগুলো। যদিও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ড়ত মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলে সারাদেশে ৯৮টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ ৩৬৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন রয়েছে। বর্তমানে ওসব ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, সরকারি ছুটিতে জাহাজ আগমন ও পণ্য খালাসের কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেভাবে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরিচালন কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে দাপ্তরিক কার্যক্রম সীমিতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম জানান, খাদ্যপণ্য, চিকিৎসাসহ জরুরি পণ্যের শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। আমদানি পণ্যের জট তৈরি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেজন্য ছুটিতে থাকা কর্মকর্তাদেরও বাসায় থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা বিভিন্ন পণ্য মালবাহী ট্রেনে করে দেশের নানা জায়গায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। আর মালবাহী ট্রেনগুলো কোনো ধরনের শিডিউল বিপর্যয় ও বিলম্ব ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। তাছাড়া মালবাহী ট্রেনে আগের চেয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে। আগে ৩ থেকে ৪টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করলেও এখন চলছে ৬টি ট্রেন।