21st, September, 2023, 1:48 pm

আতর সুরমা বিক্রি করে চলে মকলেছুরের সংসার

নিজেস্ব প্রতিনিধি : দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে যারা মা, মাটি ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় ওই দিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদেরই একজনের নাম মকলেছুর রহমান। সেই নয় মাসের যুদ্ধে জয়ী হলেও আজ ৬৬ বছর বয়সে এসে তিনি সংসার জীবনে পরাজিত এক সৈনিক। পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনের শেষ মূতুর্তে তিনি এক অসহায় স্বীকৃতি না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা। তবে তিনি কিছুই চায়না চায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। জানা যায়, কুষ্টিয়া উপজেলা সদরে রাহিনী গ্রামে ১৯৫০ সালে মৃত গোলাম রহমানের ঘরে জন্ম নেয় ছেলে সন্তান মকলেছুর রহমান। ১৯৭২ সালে তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী মোমিনপুর গ্রামে আসেন। সেখানে তিনি বিয়ে করেন। মেয়ের বাবা রিফিউজি হওয়ায় বাবা গোলাম রহমান তাকে আর মেনে নেইনি। তারপর থেকে তিনি ওই গ্রামেই বসবাস করেন। বর্তমানে যে বাড়িতে তিনি বসবাস করেন ওই বাড়ি বসবাসের অনুপযোগী জরাজীর্ণ কুুঁড়ে ঘরে স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছেন। মকলেছুর রহমান জানান, আমার বসয় যখন ১৭ বছর তখন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশ, মাটি আর মানুষের টানে সেই দিন ঘরে বসে থাকতে পারিনি। মা-বাবার নিষেধ থাকা সত্বেও জোর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই দেশের ভালোবাসার টানে। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ করতে থাকি পাক সেনাদের বিরুদ্ধে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করলাম অথচ এই স্বাধীন দেশ আজ আমার মাথা গোঁজার মতো একটু জায়গা নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেটের তাগিদে তিনি ৩০ বছর যাবত উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে আতর-সুরমা, টুপি বিক্রি করেন। তার ঘরে দুটি সন্তান জন্ম নেই। ওই দুই সন্তানদের ঘরে আসে আরো ছয় সন্তান। তবে তিনি ছেলেদের বিয়ে দেয়ার পর আলাদা হয়ে গেছে। বর্তমানে নিস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এক বেলা থেয়ে না খেয়ে কোন রকম বেচে আছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলার আড়ানী বাজারের মূল গলিতে একটি টেবিলের উপর রাখা আতর-সুরমা-টুপি ফুটপাতে বসে বিক্রি করেন। পাশাপাশি রং মিস্ত্রির কাজও তিনি করেন। ওই দোকান থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। ওই আয়ের টাকা দিয়ে কোন রকম দিন পার করছে। এছাড়া তার স্ত্রী জীবন নেছা অসুস্থ্য। তার জন্য প্রতিদিন ৪৮ টাকার ওষুধ লাগে। বর্তমানে তিনি সরকারী বরাদ্দের কোন ভাতাও পান না বলে জানান। তার দাবি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে সরকারী বরাদ্দের টাকা প্রতি মাসে পেলে অন্তত ওই টাকা দিয়ে জীবন যাবন করতে পারতাম।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please