নিজেস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে পূর্বঘোষিত শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েও পুলিশের বাধার মুখে তা পালন করতে পারেনি বিএনপি। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই অফিসের সামনে থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসটি পালন করার জন্যে আমরা একটা র্যালি করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেভাবেই প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারাই দেখেন পুলিশ আমাদের অফিসের সামনে কী রকম একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে রেখেছে। তারমধ্যে আমাদেরকে সরাসরি বলা হয়েছে যে, ‘নিচে নামলেই আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। পুলিশের বাধার সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে কোনো সংঘাতে জড়াতে চাই না। আজকের দিনটি ছিল দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে সারা বিশ্বের একটি ইস্যু, যে ইস্যুটা হচ্ছে-মানবাধিকার। সেই মানবাধিকারকে রক্ষার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্যে দিনটি সারা পৃথিবীজুড়ে পালন করা হয়। অথচ পুলিশ আমাদেরকে সেই র্যালি করতে দেয়নি। তারা আমাদের অধিকারগুলোকে বলতে দেয়নি। তাই আমরা প্রতিবাদ, ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছি। এদিকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে থেকে সকাল সোয়া ১০টায় শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীদের বলে দেওয়া হয়, কেউ প্রধান ফটকের বাইরে আসতে পারবে না। ফলে দলের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে যান। এ ব্যপারে মতিঝিল থানার এডিসি এনামুল হক বলেন, ‘আজকে ওয়ার্কিং ডে। যানজট এমনিতেই বেশি। র্যালির কোনো অনুমতি নেই। এই অবস্থায় জোর করে র্যালি করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশে প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বছরে প্রায় ১৫৯৯ জন মানুষকে বিচারবহির্ভুত হত্যা করা হয়েছে, যেটাকে তারা নাম দিয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। সারা বাংলাদেশে আজকে শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকার কারণে ৩৫ লাখ লোককে আসামি এবং এক লাখের বেশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। গুম- যেটা একেবারে মানবতাবিরোধী অপরাধ, সেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে প্রায় হাজারের মতো। আমাদের দলের শুধু নয়, বাইরেও অনেক মানুষ একইভাবে নিখোঁজ হয়েছে। এখানে যিনিই ভিন্নমত পোষণ করবেন তারই অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয়, ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেয়া হয়, না হলে তাকে গুম করে ফেলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
Leave a Reply