মাগুরা প্রতিনিধি : সাবেক পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া গ্রাম এখন আতঙ্কের জনপদ। একদিকে একাধিক মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশুন্য বালিদিয়া গ্রাম, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাটের ভয়ে প্রতিদিনই বাড়ি ছাড়া কোন না কোন পরিবার। ভয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছে আত্বীয় বাড়ি। মাঠে কাজ করতে না পারায় বহু ফসলি জমি পরিত্যাক্ত পড়ে আছে । পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বালিদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ মিনা এবং বালিদিয়া গ্রামের ইউনুস শিকদারের মধ্যে গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দের জেরে ইউনুস শিকদার সমর্থক বালিদিয়া গ্রামের সাবেক পুলিশ সদস্য আবু সাঈদ মোল্যা গত ১৩ই জানুয়ারী প্রতিপক্ষের হামলায় মারাত্মকভাবে জখম হন। পরে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বাড়িঘর, পাটকাঠি ও খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। প্রায়ই ভাংচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বালিদিয়া গ্রাম। পুলিশের উপর ইউনুস শিকদার সমর্থকদের হামলা, মফিজ মিনা সমর্থকদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট এবং ইউনুস শিকদার সমর্থক হত্যার ঘটনায় মহম্মদপুর থানায় একাধিক মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। যার আসামী রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ গ্রামবাসী। সরেজমিনে গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বালিদিয়া গ্রামের পুরুষেরা গ্রেফতার আতঙ্কে আত্ম গোপন আছেন। মামলার ভয়ে বেশিরভাগ বাড়িছাড়া। বৃদ্ধ নারী ও শিশুরা বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন। তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। ক্ষেতখামার চাষবাস বন্ধ। অভিযুক্তদের ধরতে বাড়ি বাড়ি রাত-দিন তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ। দেখা গেছে, চার দিকে শুধুই ধ্বংসস্তুপ। দোকানপাট বন্ধ। নেই ক্রেতা-বিক্রেতা। সুমসাম নীরবতা সর্বত্র। পুলিশের টহল চলছে বিরতিহীন। বিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি কম। প্রতিপক্ষের লোকজন যেকোন সময় আবারো হামলা চালাবে এমন গুজব সর্বত্র। অনেকে মূল্যবান মালপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রী ও গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। রাস্তায় তেমন লোকজন-যানবাহন নেই। পুলিশের টহল গাড়ি আসা-যাওয়া করছে। গ্রামের প্রবেশ পথে পুলিশকে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বালিদিয়া গ্রামের এনায়েত শিকদারের স্ত্রী রেখা পারভীন বলেন, “ বাড়িতে কোন পুরুষ নেই। ইউনুস শিকদারের লোকজন আমার বাড়িতে ভাংচুর এবং লুটপাট করেছে। আমরা বাড়িতে নিরাপদে নেই। মেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। কেউ আসলে পথেই মালামাল কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে কোন রকম দিন পার করছি। শিক্ষার্থী আলফাতুন খাতুন ও ইয়াসমিনসহ কয়েক ছাত্রী জানায়, ভয়ে স্কুলে যেতে পারছিনা। প্রাইভেটে যেতে পারছিনা। সামনে পরীক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাফুজুর রহমান জানান, আতঙ্কে তার স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। অনেকে নিরাপত্তার কারণে বাইরে চলে গেছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনেকে পরীক্ষা দিচ্ছে আত্মীয়-স্বজনবাড়ি থেকে। ব্যবসায়ী আহাদ মোল্যা ও মঞ্জুর মোল্যাসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দোকানপাটে হামলা ও মালামাল লুটপাটের ভয়ে দোকান খুলতে পারছিনা। আয়-ইনকাম বন্ধ। ছেলে মেয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। মহম্মদপুর থানার ওসি তারক বিশ্বাস জানান, এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। বালিদিয়ায় হত্যা, ভাংচুর এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২২জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।