নিজেস্ব প্রতিনিধি : পিছিয়ে পড়েছে আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২১) পাঠ্যবই ছাপার কাজ। ফলে শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই হাতে পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মূলত করোনা ভাইরাসের কারণে বই মুদ্রণের দরপত্র আহ্বান, কাগজ কেনাসহ সব কাজই বিলম্বের কারণে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণের দরপত্র প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কাগজ কেনার দরপত্র চার দফা পেছানো হয়েছে। আর মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের দরপত্র আহ্বান করাও সম্ভব হয়নি। অথচ চলে যাচ্ছে বছরের পাঁচ মাস। ফলে নতুন বছরে শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে হাতে বই পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এনসিটিবি আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সারাদেশের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে মুদ্রণের দরপত্র প্রক্রিয়া শুরুর আগেই দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের কারণে অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই এনসিটিবিও ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ। তাতে পিছিয়ে গেছে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই মুদ্রণের সব কার্যক্রম। এনসিটিবি বন্ধ থাকায় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোও বিপাকে পড়েছে। কারণ ওসব প্রতিষ্ঠান এখনো ২০২০ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবই ছাপানোর বিল পায়নি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের বিলই বাকি রয়েছে। অথচ জুন মাস আসন্ন। এর মধ্যে বিল না পেলে অর্থবছরও শেষ হয়ে যাবে। তাতে তারা আরো বিপদে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে।
সূত্র জানায়, প্রতি বছর মে মাসের মধ্যে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই মুদ্রণের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করা হয় এবং জুন মাসে কার্যাদেশ দেয়া হয়। জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রেসগুলোতে পাঠ্যবই ছাপানো শুরু হয়। এবার করোনোর কারণে সব কাজ পিছিয়ে গেছে। প্রাথমিকের বইয়ের দরপত্র আহ্বান করেও তা পেছাতে হয়েছে। মাধ্যমিক, কারিগরি, দাখিল, ভোকেশনাল, আদিবাসী ও ব্রেইল বইয়ের দরপত্র এখনো প্রস্তুত করাই সম্ভব হয়নি। পাঠ্যবইয়ের দরপত্র তো দূরের কথা, পাঠ্যবইয়ের এস্টিমেটই এখনো প্রস্তুত হয়নি। তবে এনসিটিবির কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, পাঠ্য বইয়ের চাহিদাপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে এনসিটিবি পেয়েছে। সংখ্যাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হবে। আর গতবারের চেয়ে এবার বই কমবে। কারণ এনসিটিবি কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় বইয়ের অপচয় কমেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে বইয়ের বাড়তি চাহিদা দেয়ার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। ফলে প্রায় ৫৪ থেকে ৫০ লাখ বই কমে যাবে। সূত্র আরো জানায়, করোনার কারণে এনসিটিবির সব কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের বইয়ের দরপত্র আহ্বান করে তা খোলার তারিখ ছিল ১১ মে। তা পিছিয়ে ৮ জুন করা হয়েছে। মাধ্যমিকের সব বইয়ের দরপত্র ঈদের পরে করা হবে। কাগজ কেনার দরপত্র পিছিয়ে ২ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। কাগজ কেনার দরপত্র এ নিয়ে চার দফা পেছানো হয়েছে। তবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এনসিটিবি ইতিমধ্যে কর্ণফুলী পেপার (কেপিএম) থেকে এক হাজার টন কাগজ কিনেছে। বাকি ১৫ হাজার টন কাগজ কেনার দরপত্র খোলা হবে ২ জুন। আগামী বছরের ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই বদলে যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে ওসব বই লেখা হচ্ছে। তাই মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের জন্য এবার পৃথক দরপত্র আহ্বান করতে হবে। তাছাড়া নবম-দশম শ্রেণির দুটি বই ‘বাংলা রচনা সম্ভার’ এবং ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ একসঙ্গে মিলিয়ে একটি মাত্র বই মুদ্রণ করা হবে। তাতে কভার পেজের আর্ট কার্ডসহ কাগজের সাশ্রয় হবে। এদিকে করোনার কারণে চাপে পড়ার কথা স্বীকার করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, প্রাথমিক স্তরের দরপত্র প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। অন্যান্য স্তরের পাঠ্যবইয়ের দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। বার বার তারিখ বাড়ানো হচ্ছে। কারণ করোনা পরিস্থিতি কিছুটা চাপে ফেলেছে। যদি ঈদের পর দরপত্র প্রক্রিয়া করা যায় তাহলে যথাসময়ের মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হবে।