নিজেস্ব প্রতিনিধি : সরকার দেশের পল্লী অঞ্চলে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি এলাকায় আর্সেনিক পরীক্ষা করে অগভীর ও গভীর নলকূপ বসানোসহ আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি ওসব এলাকায় বিকল্প পানির (পুকুর ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখা) ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপদ পানি নিশ্চিতে জনস্বাস্থ্য অধিদফতর সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। আর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশে পল্লী অঞ্চলে নিরাপদ পানি সরবরাহ করে গ্রামীণ জনসাধারণের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার বিগত ২০১৬ সালে পল্লী পানি প্রকল্প হাতে নেয়। ৭ শ’ ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আরো এক দফায় ৮০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটি এখনো চলমান রয়েছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে বলা হচ্ছে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে। আর আগের প্রকল্প শেষ না হওয়ার কারণেই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দেয়া যাচ্ছে না। এমন কি নতুন পিডি নিয়োগও হচ্ছে না। প্রকল্পটি সংশোধন করে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৮শ’ ৮৯ কোটি ৮০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, পল্লী অঞ্চলে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার প্রকল্প নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রকল্পে যতটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল, তার অর্ধেক কাজও হয়নি। অথচ দফায় দফায় প্রকল্পের টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর পুরো টাকাই খরচ হয়ে গেছে এমন তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। পল্লী পানি প্রকল্প নিয়ে পিডির বিরুদ্ধে অভিয়োগ- তিনি প্রকল্প ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তবায়ন করতে দেরি করেছে। দেরি করতে পারলেই নাকি লাভ। আর ওই প্রকল্পে হরিলুটে হয়েছে বলে খোদ মন্ত্রণালয় থেকেই অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে বলে জানা যায়। তার বাইরে সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাও প্রকল্পটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে একটি সংস্থা প্রকল্পের নানা অনিয়ম পেয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে পল্লী অঞ্চলে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান জানান, পল্লী অঞ্চলে এ যাবত কালের মধ্যে এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি এলাকায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থা করা হবে। সরকার প্রতিটি মানুষকে নিরাপদ পানির আওতায় আনতে এতো বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন প্রকল্পের পিডি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে প্রকল্পের পিডিও নিয়োগ হয়ে যাবে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় থেকে পিডি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আর পিডি নিয়োগ হলেই কাজ শুরু হবে। পল্লী অঞ্চলের পানি নিরাপদ রাখতে বেশ কিছু কারিগরি বিষয় মাথায় রেখেই কাজ শুরু করা হবে। পল্লী পানি প্রকল্পের আগের প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে সরকার সারাদেশের জন্য বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আগামী অল্পদিনের মধ্যে পিডি নিয়োগ হলেই প্রকল্পটি দৃশ্যমান হবে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা। তারই অংশ হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে। সারাদেশের মানুষ যাতে কোন প্রকার আর্সেনিকযুক্ত পানি পান না করে তার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে পল্লী পানি প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি দুর্গম তিন পাহাড়ী এলাকাতেও বাস্তবায়ন করা হবে।