রংপুর প্রতিনিধি : যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। গ্রামের মেঠোপথে ধরে হাটলে দু’পাশের ক্ষেতজুড়ে উঁকি দিচ্ছে তরতাজা সবজি। বিস্তৃত এই সবুজের বুকে শোভা পাচ্ছে শিম, করলা, লাউ, কপি, বেগুনসহ নানা জাতের সবজি। যেন সতেজ সবজির সাথে হাসছে কৃষক। এ দৃশ্য রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের। সবজির গ্রামখ্যাত শুধু মিঠাপুকুরই নয়, এখন পুরো রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা সবজি চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছে। অথচ একসময় ধান চাষে নির্ভরশীল এ অঞ্চলের কৃষকরা। কম খরচে অল্প সময়ে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ধানের পাশাপাশি আগ্রহ বাড়ছে সবজি চাষাবাদে। আর তাই সবজি ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, শস্য বিন্যাসের পাশাপাশি চাহিদা ও উৎপাদন কাছাকাছি থাকায় সবজির ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। শুধু তাই নয়, কৃষকদের সবজি চাষে আগ্রহী করতে মাঠ দিবসের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। একারণে এ বছর সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে (২০১৯-২০২০) রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৩৮ হাজার ৭শ’ ৩৬ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। যা এই মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৯ হেক্টর বেশি। এবছর রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়েছে রংপুরে। কম আবাদ হয়েছে নীলফামারী জেলায়। এই অঞ্চলের পাঁচ জেলার রংপুরে ১২ হাজার ৫শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া গাইবান্ধাতে ৭ হাজার ২৮০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৬ হাজার ৮৬১ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৬ হাজার ৪শ’ হেক্টর এবং নীলফামারী জেলায় ৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৭৩ ভাগ বেশি উৎপাদন। এদিকে সবজি চাষাবাদে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ অঞ্চলে সবজির উৎপাদন বাড়লেও প্রকৃত চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মূল্য থেকে। অথচ গ্রামের সবজি ক্ষেত পার হয়ে হাট-বাজারে পৌঁছলেই সবজির দাম হচ্ছে দ্বিগুন থেকে তিনগুন। বর্তমানে শুধু সবজি চাষ করে রংপুর অঞ্চলের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে দাবি মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের কৃষক শাখাওয়াত হোসেনের। তার মতো অনেক কৃষকই এখন ঝুকছেন সবজি চাষে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, অল্প সময়ে ফসল তোলার পাশাপাশি সবজি চাষে রোগবালাই ও লোকসানের শংকা কম। পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের কৃষক নুর হোসেন ও কৃষক হালিম মামুদ জানান, আগে তারা শুধু ধান চাষে নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে ধানের পাশাপাশি সবজিও আবাদ করছেন। কম পরিশ্রম ও অল্প পুঁজিতে ভালো ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় সবজির চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে। এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, শুধু কৃষি জমিতে নয় পতিত জমি, বাড়িতে এবং ছাদে সবজি চাষাবাদে কৃষকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একই সাথে গ্রামে কৃষকদের সবজি চাষে আগ্রহী করতে মাঠ দিবসের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা হাসান সারোয়ার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, শস্য বিন্যাসের পাশাপাশি চাহিদা ও উৎপাদন কাছাকাছি থাকায় কৃষকরা সবজিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। এখন বাজারে সবধরণের ফসলের উৎপাদন সমান হওয়া এই অঞ্চলের কৃষকরা আগের তুলনায় সবজি আবাদে ঝুঁকে পড়ছে। অন্যদিকে রংপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় দুই হাজার হেক্টর কম জমি সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ হাজার ৭শ’ ৭ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৭শ’ ৩৬ হেক্টর জমিতে। এসময় তিনি বলেন, রবি মৌসুমে সবজি আবাদে কৃষকরা লাভবান হবে। কারণ এবার আবহাওয়া পুরোপুরি সবজি আবাদের অনুকূলে আছে। এখন বাজারে ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, টমেটোসহ শাক-সবজির দামও ভালো যাচ্ছে।