নিজেস্ব প্রতিনিধি : হু হু করে বাড়ছে ধান ও চালের দাম। ঈদের আগে নতুন ধান আসায় দাম কমলেও ঈদের পরেই কয়েক দফায় বাজারে চালের দাম বেড়েছে। আর দাম বাড়ায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আর মওসুমের শেষের দিকে চালের বাজার আরো বাড়তে পারে। বর্তমানে বাজারে চিকন, মোটা ও মাঝারি সব ধরনের চালের দামই বেশি। মিলমালিকরা বলছেন, ধানের দামের সাথে সমন্বয় করে বাড়ছে চালের দাম। মিলমালিক, কৃষক ও খাদ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছর জুন মাসে যে চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, ওই চাল এ বছরে একই সময়ে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত দুবছরের মধ্যে এবারই বাজারে চালের দাম সব থেকে বেশি। আর আমন মওসুমের আগ পর্যন্ত চালের বাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে না মনে করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়ৎদাররা ধান ও চাল মজুদ শুরু করেছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এমন তথ্য রয়েছে বলে জানা যায়। সূত্র জানায়, রমজানের মধ্যে সারা দেশে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়। ঈদের পর নতুন ধান মিলগুলোতে আসায় চালের বাজার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঈদের আগ পর্যন্ত মিনিকেট, কাজললতা, বাসমতি, আঠাশ ও মোটা পারিজা জাতের চালের দাম কেজিতে মিল গেটে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। কিন্তু ঈদের পরের চিত্র মিল গেট থেকেই একেবারে ভিন্ন। ঈদের আগে কুষ্টিয়ার মিলগুলো পুরোপুরি চালু হলেও নওগাঁ, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার মিলগুলো পুরো দমে উৎপাদনে ছিল না। ঈদের পর সব জেলায় পুরোদমে উৎপাদনে গেছে। আর মিলমালিকরা প্রচুর ধান কিনছে। একই সাথে চলছে ছাঁটাই ও বিপণন কার্যক্রম। ঈদের আগে ধানের যে দাম ছিল ঈদের পর তা থেকে অনেক বেশি। সব জাতের ধানের দামই প্রতিমণে প্রায় ২৫০ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে আঠাশ, কাজললতা ও মিনিকেট (সরুজাত) ধানের দাম এখন অনেক বেশি। যে ধান গত বছর এই সময়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ ছিল, এখন তা হাজারে ঠেকেছে। পাশাপাশি সরু ধান গত বছর এই সময়ে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হলেও এখন ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। ধানের বাজার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, গত বছর জুনে কুষ্টিয়ায় চালের মোকামগুলোতে সরু চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। আঠাশ ও কাললতা চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। এখন তা ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ২০ থেকে ২২ টাকার মধ্যে থাকা মোটা পারিজা জাতের চালের দাম এখন ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা মিলগেটেই বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে ধান ও চালের বাজার বেশি হওয়ায় এ বছর সরকারি ধান-চাল অভিযান থমকে গেছে। সরকারি গোডাউনে কৃষক ও মিলররা ধান ও চাল দিতে পারছে না। মোটা চালের দাম সরকার ৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও তা এখন বাইরে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪ টাকা লোকসানে কোনো মিলারই গুদামে চাল দিতে চাচ্ছে না। পাশাপাশি বাইরে বেশি দাম পাওয়ায় নানা ঝামেলার কারণে কৃষকরা গোডাউনে ধান দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়া জেলায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। ফলে এই সময়ের মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার টনের মধ্যে মাত্র ১ হাজার টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। এদিকে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার চালের বাজার বাড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। যার আঁচ ইতিমধ্যে বাজারে পড়েছে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাজার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটাই দেখার বিষয়। ঈদের আগের তুলনায় এখন বাজার চড়া। যে মিনিকেট চাল ঈদের আগে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল তা এখন ৫০ টাকা, আঠাশের চাল ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬ টাকা, কাজললতাও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এমন কি যে মোটা চাল ৩০ টাকা ছিল, তার দামও বেড়ে ৪০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে দাম প্রসঙ্গে চাল মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, সিন্ডিকেট করে কোনো মিলার চাইলেও দাম বাড়াতে পারে না। এখন প্রতিযোগিতার সময়। ধানের বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে চালের বাজার বাড়ছে। দেশে আমফান ও ঝড়ে ১৫ ভাগ ধান নষ্ট হলেও বাম্পার ফলন হয়েছে। তাতে দেশীয় বাজারে ধান ও চালের সংকট হবে না। তবে দামের হেরফের হবে। ধানের ভাল দাম পাচ্ছে কৃষকরা। দাম আরো বাড়তে পারে। ধানের দাম বাড়লে চালের বাজার আরো বাড়বে। তাছাড়া করোনার একটা প্রভাব বাজারে পড়ছে। আর এ বছর দামের কারণে সরকারের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সংগ্রহ ঠিকভাবে না হলে সরকারের খাদ্য মজুদ কমে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে বাইরে থেকে চাল আনতে পারে। তাতেও বাজার স্বাভাবিক থাকবে।