মোঃ সোলায়মান : বিশ্বজুড়ে সর্বত্র করোনা আতঙ্ক। করোনা ভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে । যার প্রভাব পরেছে বাংলাদেশও। আমাদের দেশেও ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১২৩১ জন, ইতিমধ্যে মারা গেছেন ৫০ জন ও সুস্থ হয়ে উঠেছে ৪৯ জন। বিশ্ব জুড়ে কারোনা আতংক কারনে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশজুড়ে কার্যত লকডাউন চলছে। এই অবস্থায় দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে এই মহামারিতেও এক শ্রেণির অসাধু জনপ্রতিনিধিরা তাতে হাত দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের আতঙ্কিত মহামারি করোনা ভাইরাস ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করতে বাংলাদেশের একশ্রেণির সল্প আয়ের মানুষের এবং কর্মহীনতার ভরাডুবিতে দিন কাটাচ্ছে। এ আবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় ও কর্মহীন মানুষের কাছে ত্রান পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছেন এবং করোনা ভাইরাস যেন ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য সবাইকে ঘরে থাকার জন্য বলেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেবার পরেও মানুষ সঠিক ভাবে ত্রান পাচ্ছে না,কিছু অসাধু জনপ্রতিনিদির কারনে। যে পরিমান ত্রান দেবার কথা এবং যারা পাওয়ার কথা তারা কিছুই পাইনি এখন পর্যন্ত। যতটুকু দেওয়া হয়েছে তা আবার দেওয়া হয়েছে দলিয় চেহারা দেখে বলে আভিযোগ পাওয়াা গেছে। ঘরে খাবার না থাকার করনে, মানুষ মানছেনা লকডাউন, তারা খাবারের জন্য ঘুরছে মানুষের ধারে ধারে। কাউকে দেখা মাত্র দল বেদে ছুটে যাচ্ছে ত্রানের আসায়। বিভিন্ন জায়গায় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় শুধু তাদের নামের লিস্ট হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোন কিছু তারা পাননি। তারা বলেন সরকার ঘোষিত লকডাউন হবার পর থেকে তাদের কাজ কর্ম বন্ধ। কাজ না করার কারনে আমরা পরিবার নিয়ে আনেক কষ্ট করছি,কিন্তু আমরা আমাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারছিনা। ঘরে অপেক্ষা করেও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেন খেঁটে খাওয়া গৃহবন্দী এসব মানুষ।সরজমিন ঘুরে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ত্রানের জন্য দীর্ঘ সময় ঘরে অবস্থান করেও ত্রান পাচ্ছে না শ্রমজিবী মানুষেরা। সাধারন মানুষের অভিযোগ সরকার ঘরে থেকে বের হতে বারন করেছে। প্রায় একুশ দিন যাবৎ ঘরে গৃহবন্দী থেকেও খাবার জুটছে না এসব ছিন্নমূল শ্রমজীবি মানুষের ভাগ্যে। গার্মেন্টস,কলকারখানা বন্ধ রয়েছে চলছে না ইমারত নির্মাণ ঘুরছেনা যানবাহনের চাকা। কিছু কারখানা বেতন পরিশোধ না করেই বন্ধ করেদিয়েছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে এসব গরীব মানুষেরা। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, গাড়ি বন্ধ থাকায় তারা গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে পারছেন না। ঘোর অমানিশা ঘিরে আছে তাদের চারিদিকে। ঢাকা উত্তর সিটির ০৫ নং ওয়ার্ডের গার্মেন্টস কর্মী শাহানাজ জানান, বেতন না দিয়েই বন্ধ হয়ে গেছে ফ্যাক্টরি। ঘর ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে বাড়ির মালিক। ঘরে চাল, ডাল নেই, যেতে পারছেন না গ্রামের বাড়ি।টিভিতে দেখছেন অনেকেই ঘরে এসে দিয়ে যাচ্ছে ত্রান।কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কোন সাহায্য জোটেনি আমাদের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ০৫নং ওয়ার্ডর অনেকই অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল এর লোকজন শুধু তাদের ভোটারদের মুখ দেখে দেখে ত্রান দিচ্ছে। অনেকে ভোটার আইডি কার্ড দিয়েও ত্রাণ পাচ্ছেন না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩ নং ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ভোটার কার্ড নিয়ে গিয়েছে অনেকেই কিন্তু এখনো কোন ত্রান জুটেনি আমার মত আরো অনেকের। একই পরিস্থিতি ২ ও ৬ নং ওয়ার্ডের। তারা বিভিন্ন জায়গায় ও নেতাদের কাছে ঘুরেও এখন পর্যন্ত কিছু পাননি বলে অভিযোগ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২,৩,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মধ্যবিত্ত অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের তো ভাই আল্লাহ্ ছাড়া কেউ নেই। আমরা কোথাও যেতেও পারছিনা কিছুই পাচ্ছি ও না মরতেও পারছি না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২,৩,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে যাদের ভোটার আইডি নেই তাদের বিপদ আরও বেশী। তারা কোথাও গিয়ে দাঁড়াতেই পারছেন না। তাই তারা ত্রানও পাচ্ছে না। তারা অভিযোগ করে বলেন সবার জন্য বরাদ্দকৃত খাবার অথচ একই পরিবারের কাছে একাধিক খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন। তারা আরো বলেন যাদের পরিবারের দরকার নেই তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার। কিন্তু যাদের দরকার তারা পাননি। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি মোকাবেলায় লকডাউনে থাকা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। আর এ সমন্বয়হীনতা বাড়ছে দিন দিন। অপরদিকে শহরের নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার বাদ পড়ে যাচ্ছে ত্রান সুবিধা থেকে। এছাড়া নিম্ন বিত্ত অনেক পরিবার রয়েছে। যারা না পারে টিসিবি, ওএমএস কিংবা ফেয়ার প্রাইসএর চাল ক্রয়ের লাইনে দাড়াতে। না পারে কারও কাছে হাত পাততে। এসব পরিবারগুলো করোনা সংক্রমন এড়ানোর লাগাতার লকডাউনে কর্মবিমূখ হয়ে পড়ায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। এদের অস্ফুট আর্তনাদ শোনা যাচ্ছেনা। ত্রান বিতরণের নামে চলছে সেলফি, ফটোসেশন। একটি সাবান, টিস্যু দিতে একজন দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াচ্ছে ৮/১০ জন। শহরের বিভিন্ন মহল্লায় দরিদ্ররা ত্রান পাচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায়ে কোন তালিকায় তারা বিবেচিত হচ্ছে না। রিক্সা, ভ্যান চালক, ভাড়ার ইজিবাইক চালক, ফেরিওয়ালা ও পঙ্গু ব্যক্তিরা চরম বিপাকে পড়েছে। এরা বুঝতে পারছেনা কোন পন্থায় তারা ত্রানের জন্য বিবেচিত হবেন। কিন্ত প্রকৃত বাস্তবতা এই, দাবিদার প্রকৃত দরিদ্রদের বড় একটি অংশ এখনো ত্রান প্রাপ্তির বাইরে রয়েছে। কিন্ত এরা যেমন ত্রানের দেখা পায়নি, তেমনি কারা তা দিচ্ছে বা কারা এই তালিকা করছে তাদের খোজও প্রকৃত ত্রানের দাবিদার এসব লোকজন ও অসহায় প্রবীন নারীরা এখনো জানেনা। অনেকেই জানালেন, তাদের বলা হয়েছে এলাকা বা মহল্লা ভিত্তিক তালিকা করেই ত্রান দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রশ্ন কেন তারা ত্রান বঞ্চিত হলেন? আর যদি বা হলেন তবে তাদের চলবে কিভাবে! এদের পরিবারের সদস্যরা কি খেয়ে বেচে থাকবে।