নিজেস্ব প্রতিনিধি : সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে গত মার্চ মাস থেকেই কর্মহীন হওয়া মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে। কিন্তু সাধারণ ছুটি পর ওই ত্রাণ কার্যক্রম অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ায় বর্তমানে মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। আগে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার ত্রাণ পাঠানো হতো। এখন শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার পাঠানো হবে। ফলে ত্রাণের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমে যাবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কর্মহীন ও ভুক্তভোগীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বাদে অন্যদের ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, মানুষ কর্মে যোগ দেয়ার কারণে ত্রাণের চাহিদা কমেছে। সেজন্য এখন থেকে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে চাহিদামাফিক ত্রাণ বিতরণ করা হবে। সেক্ষেত্রে দরিদ্র ও নতুন করে লকডাউন দেয়া এলাকাগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে শুধু ত্রাণ বিতরণ করা হবে। কারণ সাধারণ ছুটি ওঠানোর পর যারা কর্মে ফিরে গেছে, এখন তারা নিজেদের ভরণ-পোষণ নিজেরাই করতে পারছে। সেক্ষেত্রে তাদের আর ত্রাণের প্রয়োজন নেই। তবে সাধারণ ছুটির কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দরিদ্রদের জন্য ত্রাণ সহায়তা থাকবে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তা যাচাই-বাছাই করবে। যেসব এলাকায় নতুন করে লকডাউন দেয়া হবে সেসব এলাকার দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। বিগত মে মাসে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ পরিবারের মাঝে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করা হয়েছে। ১২ লাখ পরিবারকে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আরো ১০ লাখ মৎস্যজীবী পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে যারা কাজে ফিরে গেছে তাদের ত্রাণ দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। কারণ এখন তাদের তেমন চাহিদাও নেই। ফলে জুনে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের যে খাদ্য সহায়তা ছিল সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। একটি বিশেষ সময়ে মানুষকে সহায়তার জন্য ত্রাণ দেয়া হয়েছিল। সেটা খাদ্য সহায়তা, চাল এবং নগদ টাকা ছিল। এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণ মানুষ কাজে ফিরছে। ফলে এখন আর আগের মতো ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন নেই। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। তবে আবার যখন প্রয়োজন হবে তখনই ত্রাণ দেয়া হবে। এদিকে এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, যে সময় মৎস্য আহরণ বিরত থাকে, সে সময় রেজিস্টার্ড মৎস্য জীবীদের সরকার ৪০ কেজি করে চাল দিয়ে থাকে। এখন একমাত্র সমুদ্র ছাড়া অন্য কোথাও মাছ ধরার ক্ষেত্রে বাধা নেই। ফলে তারা নিজেদের আয় নিজেরাই করে নিতে পারছে। আর করোনাকালীন সময়ে সরকার আলাদাভাবে তাদের ত্রাণ দিয়েছে। অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, সরকার বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছে। তাদের মতে, অনেকেই কাজে ফিরে যাচ্ছে। ওই কারণে ত্রাণ সহায়তা পাওয়া পরিবারের সংখ্যা কমে আসছে। ফলে বিগত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে যেভাবে সরকার ত্রাণ দিয়েছে সেভাবে দিতে হবে না। বরং তার চেয়েও কম দিতে হবে। তবে কী পরিমাণ কমবে সেটা পরে জানা যাবে। আগে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার ত্রাণ পাঠানো হতো। এখন একদিন পাঠানো হবে। যদি ত্রাণ বিতরণটা বৃহস্পতিবারে নিয়ে আসা হয় তাহলে তা ৫০ শতাংশ কমে যাবে।