3rd, December, 2023, 1:56 pm

কৌশল পাল্টে সক্রিয় রয়েছে পরিবহন চাঁদাবাজরা

নিজেস্ব প্রতিনিধি : সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করলেই পরিবহন চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতেই হচ্ছে। করোনার মধ্যেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং কৌশল পাল্টে সড়ক-মহাসড়কে আরো বেপরোয়াভাবে সক্রিয় রয়েছে পরিবহন চাঁদাবাজরা। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো চাঁদাবাজি বন্ধে চিঠি দিলেও সড়ক-মহাসড়কে বাস-ট্রাকে চাঁদাবাজি থামছে না। তবে বর্তমানে পরিবহন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে যানবাহনে চাঁদাবাজির অপরাধে সারাদেশের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে শতাধিক চাঁদাবাজকে পুলিশ গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫১টি মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য মতে, সারাদেশে চাঁদাবাজদের নেটওয়ার্ক চিহ্নি করে অভিযান চালানো হচ্ছে। আর ওই অভিযান অব্যাহত থাকবে। পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। দু’মাস বন্ধ থাকার পর চলতি মাসের শুরুতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে বাস-মিনিবাস- ট্রাক চালুর সময় চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি উঠে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। বরং গণপরিবহন চালুর দিন থেকেই চাঁদাবাজরা তৎপর হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কঠোর হুশিয়ারির কোনো তোয়াক্কাই চাঁদাবাজরা করছে না। শুধুমাত্র কিছু কৌশল পরিবর্তন করে তারা মাঠে সক্রিয় রয়েছে। বর্তমানে বাস টার্মিনালে সরাসরি পরিবহন শ্রমিক এবং মালিক সংগঠনের নামে চাঁদা আদায় বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বন্ধ নেই চাঁদা আদায়। যাত্রী সেবা একটি পরিবহন কোম্পানির অধীনে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে বিভিন্ন মালিকের প্রায় ৫শ বাস চালানো হয়। তার মধ্যে ঢাকা-চাটখিল রুটে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বিপুরা চর, নাসের পেটুয়া স্পটে প্রতিটি বাস থেকে দৈনিক ৪২০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। ওই চারটি স্পটের যে কোনো সুবিধাজনক স্পট থেকে চাঁদা নেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া তিষা পরিবহনের অধীনে অনেক বাস ঢাকা-কুমিল্লা-লাকসাম রুটে চলাচল করে। ওই কোম্পানির নামে লাকসামে প্রতি গাড়ি থেকে ৫২০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। তবে চাঁদাবাজরা পরিস্থিতি বুঝে চাঁদা তোলার জায়গা পরিবর্তন করে। দেশের অন্যান্য রুটেও একই কৌশলে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা শহরের মধ্যে বাসগুলোও বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির ব্যানারে চলাচল করে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সালসাবিল, বৈশাখী, তুরাগ, অনাবিল প্রভৃতি। ওই কোম্পানিগুলো এখন প্রতিটি বাস থেকে দিনে ৮২০ টাকা করে এখন নেয়া হয়। চাঁদাবাজির নতুন কৌশলকে বলা হচ্ছে সম্মিলিত চাঁদা। এখান থেকে মালিক ও শ্রমিক নেতারা ভাগ নিচ্ছে। তাছাড়া ঢাকা শহরের ভেতরে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী হিউম্যান হলার থেকেও নতুন কৌশলে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদা নেয়া হচ্ছে। শ্রমিক ইউনিয়নের নামেই ওই চাঁদা নেয়া হচ্ছে। তবে তারাও স্ট্যান্ড থেকে না নিয়ে নির্ধারিত নতুন জায়গা থেকে চাঁদা নিচ্ছে। আর পরিবহন চালকদের চাঁদা না দিয়ে উপায় নেই। সড়ক-মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি হয় চাঁদাবাজির শিকার পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। পুলিশের বিরুদ্ধেও ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র মহাসড়কে ২০১৮ সালে ৮৭ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। ২১৫টি সংস্থা ও সংগঠন মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে দিনে গড়ে ২৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলে। তবে ওই হিসাব আসলে আদায় রসিদ দিয়ে আদায়কৃত চাঁদার পরিমাণ। কিন্তু তার মধ্যে বোবা চাঁদার হিসেব নেই। তাছাড়া ওই হিসাবের মধ্যে জেলা থেকে উপজেলা এবং ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন মহানগর ও শহরের মধ্যে চলাচলকারী বাস মিনিবাস ও অন্যান্য যানবাহন থেকে আদায় করা চাঁদার হিসেবও ধরা হয়নি। এদিকে সড়ক-মহাসড়কে পরিবহনে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন জানান, ‘পুলিশ তো সব কিছু ধরতে পারে না। চাঁদাবাজির কৌশলে যে পরিবর্তন এসেছে তারা সেটা হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। আর ২৪ ঘণ্টাতো পুলিশের পক্ষে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। চাঁদাবাজির ব্যানার পরিবর্তন হয়েছে। জায়গা বদল হয়েছে। মালিক সমিতির লোকজন তো এসব চাঁদাবাজদের চেনেন। তারা তালিকা দিলেই কিন্তু চাঁদাবাজদের ধরা যায়। অন্যদিকে পরিবহন মালিক সমিতি দাবি করছে, পরিবহনে চাঁদাবাজি ৯০ ভাগ কমে এসেছে। তারা সারাদেশে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশকে তথ্য দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত নজরদারি করছে। তবে তারপরও চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ব্যানার পরিবর্তন করে পরিবহন কোম্পানির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগের কথা স্বীকার করে জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশকে জানানো হয়। তবে চাঁদাবাজির সঙ্গে তো শুধু পরিবহনের লোকই জড়িত না, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালীরাও জড়িত। তাদেরকে পরিবহন মালিক সমিতি না চেনার কারণে তাদের তালিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, বাংলাদেশ পুলিশ সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছে তাদের কাছ থেকে ধারাবাহিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please