কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার বাজারে আবারও বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। খুচরা ও পাইকারি বাজারে প্রায় সব রকম চালে কেজি প্রতি বেড়েছে ২টাকা করে। বিক্রেতারা বলছে মোকাম থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে চাল, আর মিলারদের দাবি বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। যদিও কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার ক্ষোভ আগের মতোই।
কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামের একাধিক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার কারণে মাসখানেক আগে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছিল। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে গত কয়েকদিন ধরে খাজানগরের মোকামে মিনিকেট চাল কেজিতে এক টাকা ও মোটা সব ধরনের চাল কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গত ৩ থেকে ৪দিনে কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। চলতি আমন মৌসুমে এ নিয়ে দুই দফায় কুষ্টিয়ায় চালের দাম বাড়ল। লিয়াকত রাইচ মিলের মালিক লিয়াকত হোসেন জানান, ধানের বাজার মন প্রতি পঞ্চাশ টাকা বেড়েছে। তাই মিল গেট থেকেই চাউলের দাম বেড়েছে। বর্তমানে মিনিকেট ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। কোথাও আরও বেশি। কাজললতা ৩৮ টাকা ও স্বর্ণা ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভাই ভাই রাইচ মিলের মালিক সুজন রহমান জানান, ধান দাম বাড়লে চাউলের দাম বাড়বে। এক হাজার ১শ টাকা বা সাড়ে ১১শ টাকা করে ধান কিনে সেটা মিলে আনতে ১ হাজার ২শ টাকা করে পড়ে। যা চাউলে ৫০ কেজির বস্তায় পড়তা পরে ২২শ টাকা। আমরা ২২শ টাকায় ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছি। আর ২৫ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি করছি টাকা ১২-১৩শ টাকা। আমরা সীমিত লাভে চাল বিক্রি করি। কুষ্টিয়ার পৌর বাজারে দেখা যায়, কিছুদিন আগে স্বর্ণা চাল ২৮ কেজি, কাজললতা ৩৮ টাকা, মিনিকেট ৪৬ টাকা ও বাসমতি ৫১-৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিলো সেটা এখন স্বর্ণা চাল ৩০ টাকা, কাজললতা ৪০ টাকা, মিনিকেট ৪৮ টাকা ও বাসমতি ৫৪-৫৫টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, বেশি দামে মোকাম থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই খুরচা বাজারে চাউলের দাম বেড়েছে। যে চাল কদিন আগে ২৮ টাকায় বিক্রি করেছি সেটা এখন ২৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে মোকাম থেকেই। সরকারী হস্তক্ষেপ না থাকায় চাল চক্রটি সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে পকেট কাটছে বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। চাউল ক্রেতা শাহীন আলম জানান, চাউলের দাম কমার পরিবর্তে বাড়ছেই। ধানের দাম তো কম কিন্তু চাউলের দাম বেশি। এর মধ্যে চক্রের কারসাজি রয়েছে। দায়িত্বশীলরা হয়তো দেখেও দেখেন না। আর বাজারের ব্যবসায়ীরাও ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছেন।
কৃষকদের দাবী, ধানের দাম এখনো বাজারে ৬শ ২০ টাকা থেকে সাড়ে ৭শ টাকার মধ্যে। মোটা ধান ৬শ ২০ ৬শ ৮০ টাকা, আর চিকনটা ৬শ ৮০ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান জানান, মোকামে চাউলের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। তাই আমাদের চালের দাম কেজি প্রতি দেড় থেকে দুই টাকা বাড়াতে হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা বাজার কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, ধান ও চালের বাজারে কোনো সংকট নেই। আমরা সব সময় বাজার মনিটরিং করি। এখানে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে কারণ ছাড়া যদি মিলাররা চাউলের দাম বাড়ায় সে ক্ষেত্রে আমরা আইননানুগ ব্যবস্থা নেবো। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানান, বিনা কারণে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে যদি কোনো মিল মালিক অতিরিক্ত লাভ করে থাকেন তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।