নিজেস্ব প্রতিনিধি : আত্মগোপনে রয়েছে বিদেশ ফেরত ব্যক্তি। পাসপোর্টের ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ অন্তত ৩৫ হাজার বিদেশ ফেরত ব্যক্তির কোনো খোঁজ পায়নি। তাদের একটি বড় অংশই অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবাসী ছিল। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের পাসপোর্টের ঠিকানার বাইরে অবস্থান করলে স্থানীয় থানাকে তা অবহিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই তা না মেনে আত্মগোপন করে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সেচ্ছায় তথ্য দেয়া এবং পুলিশের তদন্তে শনাক্ত হওয়া বিদেশ ফেরতদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তদন্তে শনাক্ত ব্যক্তিদেরই বিশেষভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। আর নির্দেশ অমান্য করে আত্মগোপন করে থাকা বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে কেউ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা দায়ের করা হবে। বিদেশফেরতদের মধ্যে যারা আত্মগোপনে থেকে যাবেন তাদের ক্ষেত্রেও একই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো যদি কোনো ব্যক্তি সেচ্ছায় যোগাযোগ করেন তবে তাকে সহায়তা করা হবে। পুলিশ সদর দফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশ সদর দফতর থেকে গত ২৪ মার্চ একটি প্রেসনোট দিয়ে গত ১ মার্চ থেকে যারা বিদেশ থেকে ফিরেছেন এবং পাসপোর্টের ঠিকানায় থাকছেন না- তাদের স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। ওই নির্দেশনা না মানলে মামলা করার হুশিয়ারিও উচ্চারণ করা হয়। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যানুযায়ী, ১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৩ জন বিদেশ থেকে ফেরেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের অনেক থানায় বিদেশফেরতরা সেচ্ছায় কমই যোগাযোগ করেছেন। বিগত ২৫ মার্চ থেকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরা ব্যক্তিদের সরাসরি পুলিশের নজরদারিতে নেয়া হয়েছে। ১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত যারা এসেছেন তারা হোম কোয়ারেন্টিন মেনেছেন কিনা, কোথায় কিভাবে আছেন- তা নিরাপত্তার মধ্যে নিতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারণ বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা নিজেরা আক্রান্ত না হলেও তাদের মাধ্যমে, এমনকী দ্বিতীয় ব্যক্তির মাধ্যমেও কয়েকদিন পর করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুকি থাকে। ওই কারণে বিদেশ ফেরত ব্যক্তি এবং তাদের স্বজনদের নিয়ে ঝুঁকি হোম কোয়ারেন্টিনের (১৪ দিন) পরও অনেকদিন থেকে যায়। সূত্র জানায়, বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর দিয়ে যারা দেশে এসেছেন তাদের পাসপোর্টে যে ঠিকানা ছিল ওই ঠিকানা অনুযায়ী পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন খোঁজ-খবর নিচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৫ হাজার লোককে (ঠিকানা অনুযায়ী) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কোথায় আছেন, তাও কেউ বলতে পারছেন না। এমনকি অনেকের পাসপোর্টের ঠিকানাও ভুল। প্রবাসীদের বেশিরভাগই ইউরোপের। অনেকে ইতালিসহ অন্যান্য দেশে অবৈধভাবে থেকে এসেছে। গত রোববার পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিদেশ ফেরত এক হাজার ২৪০ জন প্রবাসী এসেছে। তার মধ্যে ৫৯২ জনের ঠিকানা সঠিক পাওয়া গেছে। বাকিদের ঠিকানা এখনো পাওয়া যায়নি। দেশের প্রায় সব স্থানে একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে পাসাপোর্টের ঠিকানায় যাচাই করে যাদের পাওয়া যায়নি, তাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যক্তিকে দ্বিতীয় ঠিকানায় পাওয়া গেছে। এমন ব্যক্তিদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তবে এখনো যারা স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করছেন তাদের সহায়তা করছে পুলিশ। সূত্র আরো জানায়, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ আইন অনুযায়ী কোনো অস্থায়ী বাসস্থান বা আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিংয়ে অবস্থানকারীদের কেউ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসককে জানাতে হবে। কেউ না জানালে এবং তার মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা এক ভিডিও বার্তায় জানান, সম্মানীত প্রবাসীসহ বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা নিকটস্থ থানায় নিজে বা তার পক্ষে কেউ ফোন করেও অবস্থান জানাতে পারেন। কেউ এ নির্দেশনা না মানলে তার পাসপোর্টও জব্দ করা হতে পারে।