আহমেদ জহুর
ডা. ফেরদৌস খন্দকার আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে এসেছেন বাংলাদেশের করোনা রোগীদের চিকিৎসা-সেবা দিতে। কিন্তু তিনি ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। তাকে নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কেন?
#স্যুটকেস_আটক…
ডা. ফেরদৌস খন্দকার বাংলাদেশে পৌঁছলে তাঁর ৮টি স্যুটকেস এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়া হয়। স্যুটকেসগুলোতে রয়েছে মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই। এসবের জন্য ট্যাক্স দিতে হবে নাহলে ছাড়া হবে না বলে এয়ারপোর্টে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলেছেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। তিনি সোমবার সকালে বলেছেন, ‘৮টি স্যুটকেস এনেছি মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই ইত্যাদি সামগ্রী ডাক্তার নার্স-দের দেবো বলে। কিন্তু এয়ারপোর্টে আটকে দিলো। ট্যাক্স নাকি দিতে হবে।’
#কোয়ারেন্টিনে…
তিনি এয়ারপোর্টে নামার পর রাজধানীর বনানীতে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে তাঁকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে হজ্ব ক্যাম্পে। অথচ তাঁর নাকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আছে। আমেরিকার মেডিক্যাল সেন্টারে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সনদ দেখানোর পরও কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাড়ি যেতে দেয়নি। এতে বিস্ময় প্রকাশ করে ডা. ফেরদৌস বলেছেন, ‘আমার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তার মানে আমি করোনা প্রতিরোধী। তাছাড়া অ্যান্টিবডির সনদও আমি দেখালাম, তারপরও আমাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে! এটি কেন করা হলো জানি না। এখানে যেভাবে আমাকে রাখা হয়েছে, সেটি অনেক হতাশার, অপমানের।’
#বিতর্কের_ঝড়…
ডা. ফেরদৌসের দেশে আসা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় ওঠা এসব বিতর্ক নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘একদল লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, আমি নাকি খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা কিংবা খুনি কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই। অথচ পুরো বিষয়টি কাল্পনিক। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই দুই খুনির সঙ্গে আমার পারিবারিক কিংবা আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আমি তাদের চরম ঘৃণা করি।’
#জটিল_বিষয়…
ডা. ফেরদৌসকে নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি বেশ জটিল ও রহস্যজনক। তাকে নিয়ে এই পোস্ট দেওয়ার পর সুহৃদ নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রদত্ত লিংক দেখে আমি নিউইয়র্কে খোঁজ-খবর নিই। তাতে অনেক ভিন্নতথ্য ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানতে পারি। প্রথমত বলি, অতিরিক্ত মালামাল থাকার কারণে ট্যাক্স প্রদান না করাই সুটকেস আটক করা আইনসংগত এবং কোয়ারেন্টিনে নেওয়াও স্বাস্থ্যবিধিসন্মত। অর্থাৎ এ ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ডা. ফেরদৌস হচ্ছেন বর্তমান সরকারের একজন কট্টর সমর্থক। তিনি করোনায় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে নিউইয়র্কে যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তাতে তাকে দলদাসও বলা যায়। তাহলে তাকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে? কেন এত মিথ্যাচার করা হচ্ছে? কারা করছে এসব? তিনি কেনইবা নিউইয়র্কের দায়িত্ব ফেলে বাংলাদেশে আসলেন? তিনিতো কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন, এমনকি করোনা রোগীদের সরাসরি চিকিৎসাও করেননি। তাছাড়া বাংলাদেশেতো তার চেয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন ভূরি ভূরি। তাহলে তিনি কেন নিউইয়র্কের দায়িত্ব ফেলে আগ বাড়িয়ে এ দেশে ছুটে এলেন?
—
বন্ধুরা, নিউইয়র্কে তথ্য যাচাইয়ের পর মনে হয়েছে তিনি কোন উদ্দেশ্য নিয়েই বাংলাদেশে এসেছেন। কী উদ্দেশ্যে এসেছেন তা হয়তো অচিরেই জানা যাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত ডা. ফেরদৌসকে কটাক্ষ করা কিংবা তাকে দেবতার আসনে বসানো এবং সরকারের সমালোচনা করা সমীচিন নয় বলে আমি মনে করছি।