22nd, September, 2023, 6:54 am

আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে

শেরপুর প্রতিনিধি :

শেরপুর জেলায় ৬টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। কিন্তু কালের বিবতর্নে কোন ধরনের বর্ণমালা সংরক্ষিত না হওয়ায় মুখে মুখে প্রচলিত ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এ অবস্থা হচ্ছে বলে আদিবাসীরা অভিযোগ করেছেন। এ ভাষা রক্ষায় আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিসহ ভাষা সংরক্ষণ, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং নিজস্ব ভাষার শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে, একটা সময় ছিল, যখন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের নিজস্ব ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানতেন না বা ব্যবহার করতেন না। কিন্তু জীবন-জীবিকার তাগিদে অথবা লেখাপড়া করতে বনে বসবাসরত সন্তান গারোরা এসেছেন তাদের আশপাশে বাঙালিপ্রধান এলাকায়। আর বাঙালিরা গিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন আদিবাসী এলাকায়। এভাবে একসময় নিজ এলাকাতেই আদিবাসী গারোরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। গারো, কোচ, বর্মণ ও হদি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে লেখাপড়া বাংলা মাধ্যমেই করতে হয়। কর্মজীবনে অফিস-আদালতসহ সব কাজেই তাদের বাংলা ব্যবহার করতে হয়। এ কারণে তাদের মাতৃভাষার চর্চা কমে যায়। আদিবাসী নেত্রী হাজী অছি আমিরুন্নেসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রবেতা ম্রং জানান, গারো ভাষা বা মান্দি ভাষা একটি চীনা-তিব্বতি ভাষা। গোত্র ভেদে গারোদের মধ্যে আলাদা আলাদা উপভাষার প্রচলন রয়েছে। আচিক উপভাষাটি গারোদের মাতৃভাষা। তাদের নিজস্ব ভাষায় ‘আচিক’ শব্দের অর্থ পাহাড়। অন্যান্য উপভাষার মধ্যে আছে আবেং, আওয়ে, চিসাক, দাক্কা, গাঞ্চিং, কামরূপ, মাতচি। তিনি অভিযোগ করে জানান, এ উপজেলায় বর্তমানে তাদের মাতৃভাষা রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে তাদের মাতৃভাষা অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে। কোচ নেতা যুগল কিশোর কোচ জানান, তাদের মাতৃভাষা হচ্ছে কোচ ভাষা। এটি তিব্বতী-বর্মী ভাষা। এদেশের কোচ জাতির মানুষরা এই ভাষাতে কথা বলেন। কোচ জাতির নিজস্ব ভাষা থাকলেও নিজস্ব কোন বর্ণমালা নেই। উদ্যোগের অভাবে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকশি বলেন, ‘মাতৃভাষা ধরে রাখার জন্য আমরা নিজেরা বাড়িতে সব সময আচিক ভাষায় কথা বলি। তবু আমাদের ভাষা রক্ষা করা যাচ্ছে না। বাংলার সঙ্গে ক্রমেই মিশে যাচ্ছে। গারো শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। না হলে আগামী প্রজন্ম হয়তো এ ভাষা হারিয়ে ফেলবে। সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের ফেলো সুমন্ত বর্মণ বলেন, শেরপুর জেলায় গারো, হাজং, হদি, বর্মণ ,কোচ ও ডালু সম্প্রদায় বসবাস করলেও ইতোমধ্যে বানাই ও মারগান সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এই নৃগোষ্ঠীদের ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। কিন্তু এদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারের তেমন কোন উদ্যোগ নেই। এই বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় এ সীমান্ত জেলায় দ্রুত একটি কালচারাল একাডেমি স্থাপন করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই। এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, ‘আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ রয়েছে। তারা আবেদন জানালে, এ উপজেলায় কালচার একাডেমি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Comments are closed.

     More News Of This Category

follow us on facebook page

error: sorry please